দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ১৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসতে যাচ্ছে দেশের সব কওমি মাদরাসা।
কওমি মাদরাসাগুলোকে সরকারি নিবন্ধনের আওতায় এনে বর্তমান উপযোগী শিক্ষা কার্যকর করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের আদেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। এ জন্য ১৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ১৫ সদস্যের এই কমিটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক মো. আব্দুস সেলিমকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটিতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, জননিরাপত্তা বিষয়ক বিভাগের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাখা হয়েছে। কওমি মাদরাসার ছয় বোর্ডের চেয়ারম্যানকেও পদাধিকার বলে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই কমিটি কওমি মাদরাসাসহ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকরকরণ করতে একটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করবে। এতে কওমি শিক্ষায় নতুন একটি শিক্ষাবোর্ডও তৈরি করা হবে। এতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এ ছাড়াও এই নীতিমালার মাধ্যমে সরকার কওমী মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
পাশাপাশি কওমি মাদরাসা সংক্রান্ত আলাদাভাবে পরিচালিত ছয় বোর্ডকে সমন্বয় করে একটি কওমি শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, কওমি মাদরাসাসহ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকর করতে এবং সরকারিভাবে নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্যে সমন্বিত একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া কওমি মাদরাসা পরিচালনায় যুক্ত ৬ বোর্ডকে সমন্বয় করে একটি কওমি শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ আরও আগেই নেয়া উচিত ছিল। মাদরাসা শিক্ষা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যুগোপযোগী নীতিমালা করতে হবে।’
বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের সকল কওমি মাদরাসাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনে তদারকি করা উচিত।
‘এ উদ্যোগটি আগেই নেয়া দরকার ছিল। এতে যেমন শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের কেউ ভুল পথে পরিচালিত করতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, এ উদ্যোগের ফলে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি চাকরিতে তারা সুযোগ পাবে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কওমি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়নের বিধান রেখে ‘শিক্ষা আইন ২০২১’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।
ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার কওমি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কওমি মাদরাসাগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখেই শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়ন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
গত ৩ মে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, “নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই করতে হবে। বেকার না তৈরি করে শিক্ষার্থীদের নিষ্কৃতি দিতে কওমি মাদরাসাকে মূল ধারায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এখানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থটিই বড়। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত যাতে ‘ব্যাক ফায়ার’না হয় সে জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে।”
গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতের বিক্ষোভে সহিংস ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়। এ কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরে এপ্রিল থেকে এ নাশকতাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান ও সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে মৌলিক সংকটে পড়ে কওমি মাদরাসাগুলো।
পরে ২৫ এপ্রিল কওমি মাদরাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার স্থায়ী কমিটির সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ