যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের কোনও সেনা ঘাঁটি ব্যবহার করতে দেবে না পাকিস্তান। এক সাক্ষাতকারে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এটা পরিষ্কার করেছেন যে, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিতে তার দেশের কোনও সেনা ঘাঁটি বা যে কোনও অঞ্চল ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কোনও অনুমতি দেয়া হবে না।
এইচবিও’র জোনাথন সোয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘একেবারেই নয়। আমরা আমাদের কোনো ঘাঁটি বা পাকিস্তানের কোনও এলাকা ব্যবহার করে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে একেবারেই কোনও অনুমতি দেব না, একেবারেই না।’
এদিকে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইমরানের এই বক্তব্য প্রকাশের পরে তাকে স্বাগত জানিয়েছে আফগানিস্তানের কট্টরপন্থি ইসলামিগোষ্ঠী তালেবান। শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহা থেকে তালেবান মুখপাত্র সোহেল শাহীন এ বিষয়ে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক দ্য ডনকে বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। পাকিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের যে প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে তা অন্যায্য ছিল এবং পাকিস্তান তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।’
১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে অভিযান চালানো শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।
সে সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান সরকার । অভিযানে তালেবানদের পতন হয়। কিন্তু তার কয়েক বছর পর থেকে ফের শক্তিশালী হওয়া শুরু করে আফগানিস্তানভিত্তিক এই কট্টরপন্থি ইসলামিগোষ্ঠী।
সম্প্রতি দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। পাশপাশি, সেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং সরকার ব্যবস্থায় তালেবানদের অন্তর্ভুক্তির বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে কাতারের রাজধানী দোহায়।
কিন্তু চলমান এই আলোচনার মধ্যেই চোরাগুপ্তা হামলা ক্রমশ বাড়ছে আফগানিস্তানে। মূলত সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের লক্ষ্য করেই হামলাগুলো করা হচ্ছে এবং রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলাগুলো চালাচ্ছে তালেবানগোষ্ঠী।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে তালেবান-আলকায়দা ও আইএস এর গতিবিধির ওপর নজর রাখতে এলাকায় একটি নতুন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের প্রয়োজন বোধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রথম পছন্দ পাকিস্তান। মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রাহী।
কিন্তু, সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সরকারের এই পরিকল্পনায় দৃশ্যত পানি ঢেলে দিলেন ইমরান খান। এর আগে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং তথ্যমন্ত্রী চৌধুরি ফাওয়াদ হাসানও পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরাইশিও সিনেটে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ।
জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাবে হতাশ বাংলাদেশ
এদিকে জাতিসংঘে তোলা সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি ‘উপেক্ষিত’ থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান নিয়ে পাস হওয়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ভোটদানে বিরত থেকেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাবটি পাস হয়। এর পক্ষে ১১৯টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে ভোট দেয় শুধু বেলারুশ। বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ ৩৬টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘে ভোটাভুটির পরদিন শনিবার (১৯ জুন) এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল যে কারণ, তা স্বীকার করে না নিলে এবং তার সমাধানে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা না হলে মিয়ানমার বিষয়ে যে কোনো প্রস্তাব অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
হতাশা প্রকাশ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, আমরা যা আশা করেছিলাম, এটি তার থেকে কম এবং এই রেজুলেশন একটি ভুল বার্তা দেবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ব্যর্থ হয়, তবে মিয়ানমার কোনও ধরনের দায়বদ্ধতা অনুভব করবে না।
প্রস্তাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনও সুপারিশ বা পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব মৌলিক বিষয় প্রস্তাবে উঠে না আসায় বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এক বিবৃতিতে জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো রেজুলেশন পাশ করতে সাধারণ অধিবেশন ব্যর্থ হয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি।
অধিবেশনে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৩৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ