লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও সেখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের মধ্যে সরকারি নানা ভাতা বন্টন নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। সরকারি ভাতা বণ্টনে উপজেলা চেয়ারম্যানের অবৈধ হস্তক্ষেপের চেষ্টার প্রেক্ষাপটে এ দ্বন্দ্বের সূচনা। সম্প্রতি চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালিয়ে খুলে নিয়েছে ইউএনও অফিসসংলগ্ন সিসি ক্যামেরা। আপত্তি তুললে ইউএনওকে পিটিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেন চেয়ারম্যান।
১২ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে গালমন্দ করে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এই চেয়ারম্যান।
উপজেলা পরিষদের ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তার কথামতো কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে বলেন, ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দিব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি।’ অন্যান্য অফিসাররা এর প্রতিবাদ করলে তাদেরও গালাগাল করেন চেয়ারম্যান।
খবর পেয়ে আদিতমারী থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ইউএনওসহ উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের ১৮ কর্মকর্তার স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগের একটি কপি শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) রাতে আমদের হাতে এসেছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক অভিযোগ পাওয়ার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) রফিকুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন বলে জানান। লিখিত অভিযোগে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলা হয়েছে ইউএনওকে হুমকি দেয়ার পর সেখানে উপস্থিত উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাকেও ‘ঘাড় ধরে উপজেলা পরিষদ থেকে বের করে দেব’ বলে হুমকি দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
জেলা প্রশাসকের নিকট করা লিখিত আবেদনের অনুলিপি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১৮ কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওনার ব্যবহার বা আচরণটা ভালো নয়। এভাবে কেউ কাজ করতে পারে না। আমরা সবকিছুই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু হচ্ছিল না। গত বৃহস্পতিবারের (১২ নভেম্বর) ঘটনায় বাধ্য হয়েই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট লিখিতভাবে প্রতিকার চেয়েছি। অভিযোগে যা যা লিখিত রয়েছে; তার সবকিছুরই প্রমাণ রয়েছে।’
উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমি কাউকে খারাপ কিছু বলিনি। ইউএনও সকল কর্মকর্তাকে একত্র করে আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগপত্রে যে ভাষায় লেখা হয়েছে। এসবের কোনো ভিত্তি নেই। আমি সঠিক তদন্ত চেয়েছি।’
ফারুক ইমরুল কায়েস আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, ‘আমার পিতা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক সামসুল ইসলাম সুরুজকে ২০০৩ সালে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখনো বিচার হয়নি। এখন আমার বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্র চলছে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রফিকুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে।’
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ