ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর চীন বিরোধী আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিপরীতে খড়্গহস্তে দাঁড়িয়েছে চীন। ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর নেতাদের চীন পর পর হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, একটি ছোট গ্রুপ বিশ্বের ভাগ্য ঠিক করবে এমন দিন অনেক আগেই চলে গেছে। লন্ডনে চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র এসব বলেন বলে রবিবার (১৩ জুন) উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
এদিকে এএফপির আজ সোমবারের(১৪জুন) খবরে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুর ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে চীনের সমালোচনা করায় জি-৭ এর ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশটি।
চীনের বিরুদ্ধে জোট জি-৭
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প আরেকটি প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭। যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে ধনী দেশগুলোর এই জোট। যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে চলমান জি ৭ সম্মেলনে দেশগুলোর নেতারা এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। এছাড়া নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কোম্পানিগুলোকে উন্নত অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জি-৭।
এদিকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তিনি এ আহ্বান জানান। বলেন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা চালিত বিল্ড বেটার ওয়ার্ল্ড পরিকল্পনাটি চীনা প্রকল্পটির বিকল্প হতে পারে। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামোয় বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নতুন জোট গঠনের আহ্বান জানান বাইডেন। এছাড়া চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি তোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সমালোচনা করেন জোরপূর্বক মুসলিমদের বন্দী শিবিরে আটকে রাখা ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ।
বিশ্বব্যাপী চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জ ছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অন্যতম ইস্যু। বিশেষ করে বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প ঠেকাতে একাট্টা জি ৭।
জি-৭ জোটকে চীনের পর পর হুঁশিয়ারি
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি–৭–এর নেতাদের সতর্ক করে চীন বলেছে, গুটিকয়েক দেশের ‘ছোট’ একটি গ্রুপের বিশ্বের ভাগ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে জি–৭ নেতারা যখন চীনের প্রভাবের বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন, সেই সময় লন্ডনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র এই মন্তব্য করেছেন বলে রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা সর্বদা বিশ্বাস করি বড় বা ছোট, শক্তিশালী বা দুর্বল, দরিদ্র বা ধনী দেশ- সবাই সমান। বিশ্বে বিষয়গুলো সমস্ত দেশের পরামর্শের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত।’
বিশ্বজুড়ে চীনের বিপুল কর্মযজ্ঞের পাল্টায় বড় ধরনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছেন জি–৭ ভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, কানাডা ও ইতালির নেতারা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের উত্থানের বিপরীতে এখনই পশ্চিমা শক্তিগুলোকে সক্রিয় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে রোববার চীনের লন্ডন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘একটি ক্ষুদ্র গ্রুপের বৈশ্বিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, দেশ সে বড় বা ছোট হোক, শক্তিশালী বা দুর্বল, ধনী বা দরিদ্র— সবাই সমান এবং বৈশ্বিক বিষয়গুলো সব দেশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ঠিক করা উচিত।’
এদিকে জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুর ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে চীনের সমালোচনা করায় জি-৭ এর ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশটি। খবর এএফপির।
যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত জি-৭ নেতাদের সম্মেলনের পর জোটের পক্ষ থেকে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায় ও হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের ওপর চীনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে করা সমালোচনা করা হয়। জোটের অন্যতম শরিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করুন।
সোমবার(১৪ জুন) যুক্তরাজ্যে অবস্থিত চীনের দূতাবাস জি-৭ এর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
দূতাবাসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্যে জিনজিয়াং সংক্রান্ত ইস্যুর সুবিধা নিচ্ছে জি-৭, যা আমরা তীব্রভাবে বিরোধীতা করছি।’
বিবৃতিতে জি-৭ এর বক্তব্যকে ‘মিথ্যা, গুজব ও ভিত্তিহীন দাবি বলে’ উল্লেখ করে চীনা দূতাবাস।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দাবি করে আসছে, জিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের চীন বন্দি শিবিরে আটকে রেখেছে। তবে চীন বারবার দাবি করে আসছে, তারা জিনজিয়াংয়ে ইসলামিক চরমপন্থা দমনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
জি-৭ এর বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা আমাদের মূল্যবোধ তুলে ধরব, যার মধ্যে রয়েছে চীনকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা মেনে চলতে আহ্বান জানানো।’
জি-৭ এর নেতারা করোনাভাইরাসের উৎস জানতে চীনে একটি নতুন অনুসন্ধান চালানোরও দাবি তোলেন।
এ প্রসঙ্গে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বর্তমান মহামারিটি এখনও বিশ্ব জুড়ে চলছে এবং উৎস সন্ধানের কাজটি বৈশ্বিক বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, এটিকে রাজনীতিকরন করা উচিত নয়।’
চীনকে আটকাতে বাইডেনের প্রস্তাব নিয়ে গবেষণা করবে ভারত
চীনের বেল্ট এন্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের বিকল্প হিসেবে সদ্য সমাপ্ত জি-৭ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে বিশ্বব্যাপী অবকাঠামোগত উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য ‘বিল্ড ব্যাক বেটার বা আরো ভালো তৈরি করুন’ প্রস্তাব করেছেন সেটি নিয়ে গবেষণা করবে ভারত। খবর প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেনের প্রস্তাব অনুসারে, মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনে ৪০ ট্রিলিয়নের বেশি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে প্রধান গণতান্ত্রিক দেশগুলো। পাশাপাশি আশা করা হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা পি হরিশ বলেন, আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রস্তাবটি নিয়ে গবেষণা করবে এবং সম্ভবত পরবর্তীতে এটির সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পটি ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকি এটির সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোও সমালোচনা করছে। স্থানীয় কর্মসংস্থান ও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে এবং লাল পতাকা ক্রমশ ভারী হচ্ছে। তবে ভারত এই প্রকল্পে যুক্ত হতে অস্বীকার করেছে। যেখানে প্রতিবেশি পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ