প্রায় অর্থ সংকটের কথা বলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অথচ এ অবস্থায়ও সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যবহারের জন্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকায় গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।
মহামারি করোনার সময় এভাবে গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মেয়র স্বল্প দামের গাড়ি কিনে বাকি টাকা চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগছে। ঠিকাদারদের উন্নয়ন বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিল খাতে প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিটি মেয়র যে গাড়িটি ব্যবহার করেন সেটা ২০০৬ সালে কেনা। ওই সময় মেয়র ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তীতে মেয়র মনজুর আলমও গাড়িটি ব্যবহার করেন। তবে মেয়র থাকাকালে আ.জ.ম নাছির উদ্দীন ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। ওই সময় গাড়িটি প্রকৌশল বিভাগ ব্যবহার করে।
এদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর আগে কেনা গাড়িটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ত্রুটি দেখা দেয়। সম্প্রতি মেয়রকে নিয়ে ঢাকা যাওয়ার সময় কুমিল্লায় ত্রুটি দেখা দেয় গাড়িটিতে। এছাড়া চকরিয়া যাওয়ার সময়ও ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। এ অবস্থায় গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক।
একটি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরেকটি গাড়ি কেন কেনা হচ্ছে, জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক দাবি করেন, মেয়রের গাড়িটি ১৫ বছরের পুরোনো হয়ে গেছে। গাড়িটিতে বারবার ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি মেয়র বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় মাঝপথেই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতি একজন মেয়রের জন্য বিব্রতকর। তাই গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও মেয়র মহোদয় তাতে রাজি হননি। পরে অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা।
চট্টগ্রামের একটি সংস্থার সাবেক যন্ত্র প্রকৌশলী গণমাধ্যমকে বলেন, মেরামতের মাধ্যমে গাড়িটি আরও কয়েক বছর ব্যবহার করা সম্ভব। তবে মেরামত খরচ একটু বেশি পড়বে।
আর্থিক সংকটে থাকার পরও গাড়ি কেনার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইল সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মেয়রের গাড়ি কেনার বিষয়ে সব প্রক্রিয়া যান্ত্রিক শাখা করছে। কীভাবে অর্থের সংস্থান করা হবে, সে সম্পর্কে তারা ভালো বলতে পারবে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের দাবি, যান্ত্রিক শাখার আওতায় রাজস্ব আয় রয়েছে। ওই আয় থেকে গাড়ির টাকা ব্যয় করা হবে।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী গত ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেন। নতুন গাড়ি কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অবশ্য তিনি দাবি করেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকৌশল বিভাগ থেকে নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শুরুতে গাড়ি কিনতে তিনি রাজি ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন ত্রুটির কারণে গাড়িটি কয়েকবার মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সবাই বলার পর গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছেন।
তবে মহামারি করোনার সময় এভাবে গাড়ি কেনার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে দেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। চিকিৎসা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট। এ রকম অবস্থায় এত দামি গাড়ি না কেনাটাই ছিল প্রত্যাশিত। মেয়র ৩০-৪০ লাখ টাকার গাড়ি ব্যবহার করে বাকি টাকা চিকিৎসা খাতে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। মানুষের ভালোবাসাও পেতেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ