চট্টগ্রাম শহরের ৪৬৬ কিলোমিটার সড়কে এলইডি লাইট স্থাপন প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশার জট বাঁধতে শুরু করেছে। ইন্ডিয়ান এলওসি ( লাইন অব ক্রেডিট) ফান্ডের আওতায় ২৬১ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকে (জাতীয় নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন পাবার প্রায় তিন বছর গত হয়েছে। শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রকল্পের ডিপিপি পরিবর্তন করে ফিলিপসসহ দুইটি ব্রান্ডকে বাদ দেয়া , চারটি প্যাকেজকে এক প্যাকেজে যুক্ত করে দরপত্র আহবান, পিপিআর( পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা) লঙ্ঘনের মতো অসঙ্গতি, এলটিএম দরপত্রের শর্তে পরিবর্তন, অভিজ্ঞতা সনদে (FAC) অনিয়মের কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তার সৃস্টি হয়। এমনসব অসঙ্গতি আর অনিয়মের কারণে প্রকল্প পরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
পিপিআর বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে পুনঃ দরপত্র আহবানের অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবার দুই মাস পর সিদ্ধান্ত আসে নতুন করে দরপত্র আহবান না করে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাব মুল্যায়নের।
চলতি মাসের ০১ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাত সদস্যের মুল্যায়ন কমিটি ইন্ডিয়ান এক্সিম ব্যাংকের শর্ট লিস্টেট তিন ঠিকাদারের প্রস্তাবনা মুল্যায়ন শেষ করেছে। প্রকল্পটির আন্তর্জাতিক দরপত্রে এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডার প্রক্রিয়া) পদ্ধতিতে প্রাক বাছাইয়ে ভারতের তিন প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হলেও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় উপ-ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা চরমে পৌঁছেছে। স্থানীয় উপ-ঠিকাদার হিসেবে ভারতের শাপোর্জি পালনজি এন্ড কোম্পানির (এসপিএল) প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ দাবি করেছেন তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের দরপত্রে অংশগ্রহণই করেনি। অথচ চসিকের মুল্যায়ন কমিটির সভায় এইচটিএমএস’ লিমিটেড ও এসপিএলের ক্রুটিপুর্ণ নিম্মমানের এলইডি লাইটের সাম্পলকে সর্বোচ্চ নাম্বার ( একশো নাম্বারে ৯৭.৮০) দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং প্রকল্পটির পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ।
স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন আফতাব আহমেদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আস্তানা গেঁড়েছেন জাইকা প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে। জাইকার ৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রকল্পে নিম্মমানের ক্যাবেল ও এলইডি লাইটের ব্যবহার করার বিষয়টি চসিকের তদন্ত প্রতিবেদনে উম্মোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশের আনুকূল্যে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের দূর্নীতি, অনিয়মের মাস্টারমাইন্ড ঝুলন কুমার দাশের সাথে হাত মিলিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি কাজ সম্পন্ন করার মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে মাথা ঢুকিয়েছেন মেসার্স এলএসএল ও এইচটিএমএস লিমিটেডের এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন দূর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে যে নাজুক পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছিলো সেটির জন্য দায়ী সিন্ডিকেটের শীর্ষ কুশীলব এই আফতাব আহমেদ। তিনি মেসার্স এএসএল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। একই সাথে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জাইকা এলইডি লাইট স্থাপন প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ এইচটিএমএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কালো তালিকাভুক্ত হবার পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আলোচিত দূর্নীতি মামলার আসামী হয়েও ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আস্তানা গাঁড়েন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে।
জানতে চাইলে কালো তালিকাভুক্তির বিষয়টি স্বীকার করে আফতাব আহমেদ দাবি করেন, ‘ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন কাজ করার আইনী অধিকারই নেই। তবে এলওসি ফান্ডের এই প্রকল্পের কাজে আমি দরপত্রে অংশগ্রহণ করি নাই। ‘
সচিকের সুত্রমতে, ভারতের শাপোর্জি পালনজি লিমিটেড স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদের মালিকানাধীন এইচটিএমএস লিমিটেডের মাধ্যমে চায়নার ‘ওসরাম’র এলইডি লাইট ব্যবহারের প্রস্তাবনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এই প্রকল্পে। প্রকল্প মুল্যায়ন কমিটির ঘনিষ্ঠ সুত্র অনুযায়ী এইচটিএমএস লিমিটেডের উপস্থাপন করা এলইডি লাইটের নমুনাটি নিম্মমানের হওয়ার কারণে চসিকের মেয়রসহ কারো কাছেই মনোপূত হয়নি। তথাপি প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ তার মুল্যায়নে এইচটিএমএস লিমিটেড -এসপিএল’কে একশো নাম্বারের মধ্যে ৯৭.৮০ নাম্বার দিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন পছন্দের শীর্ষে। ক্রুটিপূর্ণ নমুনার জন্য ডিপিপির নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ নাম্বার কাটা যাবার কথা ; মুল্যায়ন কমিটির কোন সদস্যই প্রতিষ্ঠানটির ( ওসরাম ব্র্যান্ড) ৫০ নাম্বার কাটেননি। মুল্যায়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান সিগনেফাই ইনোভেশন ইন্ডিয়াকে একশো নাম্বারের মধ্যে ৪৭ দিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ‘নক আউট’ করেছেন তিনি।
পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট) বিশেষজ্ঞদের মতে, কালোতালিকাভুক্ত প্রশ্নবিদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠানকে এমন অস্বাভাবিক মুল্যায়নের নাম্বারের দেবার কারণে পুরো এই প্রকল্পের দরপত্র মুল্যায়ন প্রক্রিয়াই বাতিল করতে হবে। আইন অনুযায়ী, ‘ কমিটির সদস্য কোন দরদাতাকে অস্বাভাবিক নাম্বার প্রদান করলে মুল্যায়ন কমিটির সভাপতি সেই সদস্যের কাছে অধিক নাম্বার দেবার যৌক্তিকতাসহ ব্যাখা চাইবেন। সেই ব্যাখা সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্ট সদস্যের মুল্যায়নের নাম্বার বাতিল করে কমিটির বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পুনঃমুল্যায়ন করবেন। ‘
প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ একইসাথে দরপত্রে অংশগ্রহণ করা অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বনিম্ন নাম্বার দিয়ে সুষম প্রতিযোগিতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত লাইট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিগনেফাই ইনোভেশন ইন্ডিয়া লিমিটেডকে ( ফিলিপস) একশো নাম্বারের মধ্যে ৪৭ নাম্বার দেবার যুক্তিকথা খুঁজে পাচ্ছেন না মুল্যায়ন কমিটির বাকি সদস্যরা।
জানতে চাইলে এসপিসিএল’ এর স্থানীয় উপ-ঠিকাদার হিসেবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস’ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ জানালেন বোমা ফাঁটানো তথ্য। তিনি দাবি করেছেন এই দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি তার প্রতিষ্ঠান। এমনকি এইচটিএমএস লিমিটেডের পরিচালক পরিচয় দেয়া ইন্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন নামের ব্যক্তিকেও তিনি চিনেন না। ‘
এ এলইডি প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে এসপিএল-এইচটিএমএস লিমিটেডের অনুকূলে কার্যাদেশ ইস্যুর পর্যায়ে আসার পর এইচটিএমএস’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাবের এমন বক্তব্যের পরে কানাঘুঁষা চলছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কার্যালয় জুড়ে। কেউ কেউ আফতাব আহমেদের বক্তব্যকে নির্ভেজাল মিথ্যাচার বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন এইচটিএমএস’ এর ডকুমেন্টস ব্যবহার করে জনৈক মাহবুব হোসেনকে সামনে রেখে লাইট স্থাপনের ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন স্বয়ং প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ। একইভাবে তারা জাইকার এলইডি প্রকল্পের কাজও করছেন।
এদিকে, দরপত্রের নথি অনুযায়ী এক্সিম ব্যাংকের শর্টলিস্টের তালিকায় থাকা ভারতের বৃহৎ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি শাপোর্জি পালনজি এন্ড কোম্পানি লিমিটেড’এর স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে দরপত্রে অংশ নিয়েছে আফতাব আহমেদের মালিকানাধীন ‘ এইচটিএমএস’ লিমিটেড ‘। জাইকা এলইডি প্রকল্পের বিভিন্ন নথিতে এইচটিএমএস লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসা মাহবুব হোসেন দরপত্রে অংশ নিয়েছেন ‘ট্রেড ম্যাজিট্রিক্স লিমিটেড’ নামের ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। দরপত্রের মুল শর্ত অনুযায়ী একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে একবারই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একই ব্যক্তি দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থেকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করার এমন অভিযোগ গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টিকে আমলে নেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স এএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদের প্রতিষ্ঠান দরপত্রে কিভাবে অংশ নিয়েছে -এমন প্রশ্নের জবাবে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল হক বলেন, ‘ দরপত্রে অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ কালো তালিকাভুক্ত হবার বিষয়টি চসিকের জানা ছিলো না। ‘
আর চসিকের বিদ্যুৎ উপ-বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এলওসি এলইডি লাইট স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ এমন প্রশ্নের উত্তরে গণমাধ্যমকে বলছেন ‘ সবকিছু মেয়র জানেন ‘।
যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এম মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে অংশগ্রহণের বিষয়টি জানেননা তিনি। ‘
কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি আফতাব আহমেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস লিমিটেডের দরপত্রে অংশগ্রহণ, ক্রুটিপুর্ণ নিম্মমানের এলইডি লাইটের সাম্পল উপস্থাপন করেও মুল্যায়নের শীর্ষ থাকা- এসব প্রশ্নের উত্তরে চসিকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মেয়রের উপর দোষ চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন, কেউ না জানার অভিনয় করেছেন ; আর এইচটিএমএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেছেন এই দরপত্রে তার প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণই করেননি। সুত্রমতে, এমনকি জাইকার এলইডি প্রকল্পের কাজের উপ ঠিকাদার হিসেবে ট্রেড ম্যাজিট্রিকস লিমিটেডের জমা দেয়া অভিজ্ঞতা সনদটি জাল। ‘
চসিকের সুত্রমতে, জাইকা এলইডি প্রকল্পের ক্রুটিপুর্ণ কাজটির ঠিকাদার এইচটিএমএস লিমিটেড হলেও সেই কাজটি করেছে মুলত ইন্জিনিয়ার মাহবুব ও প্রকল্প পরিচালক নিজেই। নতুন প্রকল্পেও একই ফর্মুলা ব্যবহার করে এইচটিএমএস লিমিটেডের নাম ব্যবহার করে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে চসিকের তিন কর্মকর্তা। ভারতের শাপোর্জি পালনজি লিমিটেডের সাথে স্থানীয় ঠিকাদার হিসেবে চুক্তি করার বিষয়টিও দেখভাল করেছে চসিকের সেই কর্মকর্তারা। ভারতের ইএসএলের সাথে চুক্তি করে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছেন ইন্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন নামের আরেক সিন্ডিকেট সদস্য। যদিও দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনটিই এলইডি লাইট উৎপাদনকারী নন।
এই প্রকল্পের দরপত্রের ডকুমেন্টসে ৪.২, ৪.৫ অনুচ্ছেদের শর্তে বলা আছে কোন প্রতিষ্ঠান ভারতে বা ঋনগ্রহনকারী দেশের কোন সরকারি বেসরকারি সংস্থার কালো তালিকাভুক্ত হলে বা অযোগ্য ঘোষিত হলে অথবা নিষিদ্ধ হলে সেই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক এই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে দরপত্রের শর্তে।
ভারতের গণমাধ্যমকর্মিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংলোরে তিন লক্ষ ইউনিট এলইডি লাইট স্থাপনের কাজ করতে না পারার কারনে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এসপিএলের ( জেবি) কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর। বিহার স্টেডিয়ামের কাজও সময়মতো শেষ করতে না পারার কারণে রাজ্য সরকার প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছিলো। সেই বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ভারতের এক্সিম ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এলওসি ফান্ডের এই প্রকল্পের দরপত্রে আপিলের মাধ্যমে প্রাক বাছাই তালিকায় অন্তভূক্ত হয় শাপোর্জি পালনজি লিমিটেড। কিন্তু চলতি বছরের ২ রা জুলাই এবং ৪ জুলাই আদালত পূর্বের নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে নতুন আদেশ দিয়েছেন; ফলে প্রাক বাছাইয়ের তালিকায় অন্তভূক্ত থাকলেও এসপিএলের এই প্রকল্পের দরপত্রের শর্তপূরনে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
একই সাথে এসপিএল’র স্থানীয় ঠিকাদার হিসেবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করা এইচটিএমএল লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিকের কালো তালিকাভুক্তি, তাদের প্রস্তাবিত ওসরাম ব্র্যান্ডের অরিজিন এবং সবশেষ এইচটিএমএস’ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদের দরপত্রে অংশগ্রহণ করা নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য সবকিছু মিলিয়ে এই প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন ভারতের এক্সিম ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ভারতীয় নমনীয় ঋন সুবিধার আওতায় চট্টগ্রাম শহরের ৪৬৬ কিলোমিটার সড়কে ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্মার্ট এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিলো গেল বছরের মার্চ মাসে। ভারত সরকারের মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ‘এলটিএম’ পদ্ধতিতে এই দরপত্র আহবান করে। প্রকল্পটির আন্তর্জাতিক দরপত্রের শর্তানুযায়ী কোন কালো তালিকাভুক্ত বা অযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রি কোয়ালিফাই হতে পারবে না । সেই হিসেবে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ‘শাপুরজি পালোঞ্জি লিমিটেডকে প্রি কোয়ালিফাই তালিকা থেকে বাদ দেয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি আপিল করলে তাদেরকে পুনরায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকার ইআরডিকে (বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ) ইমেইল করে ‘এসপিএল’সহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করার বিষয়ে জানানো হয়েছিলো।
এইচটিএমএস লিমিটেড, শাপোর্জি পালনজি লিমিটেডের সাথে স্থানীয় উপ-ঠিকাদার হিসেবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে, এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুল্যায়ন কমিটির সদস্য পিডিবি নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন। মুল্যায়ন কমিটির আরেক সদস্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, শাপোর্জি পালনজি লিমিটেড, স্থানীয় উপ ঠিকাদারের মাধ্যমে ওসরাম নামের একটি ব্রান্ডের এলইডি লাইট প্রস্তাব করেছেন।
কিন্তু এইচটিএমএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ বলেন, ইন্ডিয়ান এলওসি ফান্ডের এলইডি লাইট স্থাপনের নতুন প্রকল্পের দরপত্রে অংশগ্রহণের সাথে আমার এক পারসেন্ট যোগসাজশ নেই। কারণ এলওসি ফান্ডের কাজে অনেক জটিলতা আছে। বিল পেতে দেরি হয়। আমি কেন এই কাজ করতে যাবো? সিটি করপোরেশনের জাইকার কাজ করেছি, এক বিল পেতে ৩৪ জনের স্বাক্ষর লাগে। এক ক্যাবেল তিন চার বার টেস্ট করা হয়। আমি এলওসি ফান্ডের এলইডি প্রকল্পের কাজের দরপত্রে অংশগ্রহণ করি নাই। কেউ আমার বা আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করলে আমি আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করবো। অনলাইনে আমার প্রতিষ্ঠানের কাগজ পত্র দিয়ে অন্য কেউ কাজ করতে চাচ্ছে কিনা-সেইটা যাচাই করেন। ‘
চসিকের দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী এইচটিএমএস লিমিটেড আফতাব আহমেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এই হলফনামার দেয়া স্বাক্ষরের সাথে সাদৃশ্যও রয়েছে আফতাব আহমেদের। কিন্তু এই দরপত্রে তার অংশগ্রহণ না করার তথ্য নতুন করে বাড়াতে শুরু করেছে রহস্য। এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে, জাইকা এলইডি প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবার পরও একই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এলইডি প্রকল্পের নতুন কাজ করানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে জানা গেছে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সুত্রে। এইচটিএমএস লিমিটেডের কাগজ,অভিজ্ঞতা সনদ ব্যবহার করে এলওসি ফান্ডের এই দরপত্রে উপ-ঠিকাদার হিসেবে অংশগ্রহণ করে লুটপাট ও অনিয়মের জাল বিছানো চসিকের তিন কর্মকর্তার বিষয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।
সুত্রমতে, এমন নজিরবিহীন দূর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হবার পর এই প্রকল্পের সব নথি তলব করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়কে কার্যাদেশ দেবার বিষয়ে ‘নেতিবাচক সিদ্ধান্ত’ জানিয়েছে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের এক্সিম ব্যাংক।
আপনার মতামত জানানঃ