অস্ত্র ঠেকিয়ে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় বসবাসরত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করতে আবুল খায়ের গ্রুপ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, মধ্যম সোনাইছড়ির পাহাড়ে অবস্থিত ত্রিপুরাপল্লীর বাসিন্দারা পাড়ায় জায়গার সংকুলান না হওয়ায় পাশের খাল সংলগ্ন একটি খোলা মাঠে কয়েকটি পরিবারের বসবাসের জন্য ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে। কাঠ-বাঁশ আর ছন দিয়ে বানানো সেই ঘরে সন্তানদের নিয়ে ৬টি পরিবারের প্রবেশের পরই ঈদের দিন (১৪ মে) আবুল খায়ের গ্রুপের লোকজন আনসার সদস্যদের নিয়ে সেখানে হাজির হয়।
তখন তারা সাফ জানিয়ে দেয়, এখানে কোন ঘর নির্মাণ করা যাবে না, এটি আবুল খায়ের গ্রুপের জায়গা। এসময় কারখানাটির সশস্ত্র সিকিউরিটি বাহিনী আনসার ও স্থানীয় কতিপয় লোকজন মিলে অস্ত্র ঠেকিয়ে অসহায় ত্রিপুরাদের বসতি থেকে সরে না গেলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় ত্রিপুরা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে থেকেই ত্রিপুরাদের সেই বসতস্থান নিজেদের বলে দাবি করে আসছে আবুল খায়ের গ্রুপ। এমনকি বছর তিনেক আগে থেকে ত্রিপুরাদের জায়গায় আবুল খায়ের গ্রুপের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সীমানা বেড়া নির্মাণ করতে গেলে সে সময়েও ত্রিপুরাদের সাথে ঝামেলা বাঁধে। সে সময় ঝামেলা মিটে গেলেও আবারো ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে ঘর নির্মাণে বাধা ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠে আবুল খায়ের গ্রিপ।
ত্রিপুরা পল্লীর সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার আগে থেকে কোন রকম নাগরিক সুবিধা ছাড়াই এখানে বসবাস করে আসছি। পাহাড়ে জুম চাষ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকার কারণে পরিবার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি নতুন স্থানও পাওয়া যাচ্ছিল না। সামনের খোলা মাঠটিতে ইউএনও স্যার আমাদেরকে ১০ টি সরকারি ঘর করে দেয়ার কথা বলেছিলেন।
কাঞ্চন ত্রিপুরা আরও বলেন, ‘বিষয়টি ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান সাহেবও অবগত। আমরা সবাই জানি, মাঠটি সরকারি খাস জায়গা। কিন্তু হঠাৎ করে আবুল খায়ের গ্রুপ এটি তাদের বলে দাবি করছে। এরপর থেকে ১০টি ঘরের কাজ আর হচ্ছে না। ইউএনও স্যারও ঘরগুলো অন্যত্র দিয়ে দেন। তবুও আমরা সেখানে নিজ উদ্যোগে ঘর নির্মাণ করি। ঈদের দিন লাঠি-সোটা নিয়ে রেললাইন দিয়ে একদল ক্যাডার বাহিনী আমাদের পাড়ায় আসে। তাদের সাথে আনসাররাও ছিল। আনসার সদস্যরা আমাদের প্রতি এ্যাকশন মুডে অবস্থান নিয়েছিল এবং তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছিল। পরে আমরা প্রতিবাদ করলে তারা চলে যায়।’
ত্রিপুরা পল্লীর একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আবুল খায়ের গ্রুপের লোকজনের সঙ্গে আসা আনসার সদস্যরা গত শুক্রবার আমাদের বুকের উপর বন্দুকের নল তাক করেছিল। লাঠি-সোটা নিয়ে শোডাউন দিচ্ছিল। আমাদের নারী-শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তারা বার বার হুমকি দিচ্ছিল ঘরগুলো ভেঙে দেয়ার৷ আমরা এখন কোথায় যাবো? যেদিকে যাই শুধু বাধা আর বাধা। কোথাও যেন ঠাঁই নেই আমাদের।’
ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরার দেওয়া তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডের মধ্যম সোনাইছড়িতে ৭০, ছোটদারোগারহাটে ৬, সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ৪৫, বাঁশবাড়িয়ায় ২৫, সুলতানা মন্দিরে ৩৫, ছোট কুমিরায় ১২০, শীতলপুরে ৩০, মদনহাটে ১৬ ও আবুল খায়ের ফ্যাক্টরির ভিতরে ৩০ টি ত্রিপুরা পরিবার ১৯৭১ সালের আগে থেকে বসবাস করে আসছে।
এদিকে আবুল খায়ের গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (এডমিন) মোহাম্মদ ইমরুল কাদের ভূইয়া বলেন, ত্রিপুরা পল্লীর ১ কিলোমিটার উত্তরে আবুল খায়ের গ্রুপের জায়গায় এসে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘর নির্মাণ করছিল। ঈদের ছুটির সুযোগে এ কাজটি তারা করেছিল। এটি কোন উচ্ছেদ নয়, এটি আবুল খায়ের গ্রুপের জায়গা।
আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমাদের জমির সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কাগজের উপর ভিত্তি করে তিন দিনের মধ্যে তিনি একটি সমাধান দেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আবুল খায়েরের মত বড় শিল্প গ্রুপ কারও জমি দখল করবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। কিছু ব্যক্তি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৪১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ