করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি না কমে আসায় আরও সাত দিন অর্থাৎ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
এর আগে, শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ও ভারতের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে বিধিনিষেধ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন যেমনভাবে বিধিনিষেধ চলছে, তেমনভাবে আরও এক সপ্তাহ বিধিনিষেধ বাড়ানোর পক্ষে সরকার। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
লকডাউন চলাকালে পূর্বের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এবারে নতুন করে দুটি শর্ত যোগ করা হয়েছে। সেগুলো হল: লকডাউনে সরকারের রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত সব দফতর ও সংস্থা জরুরি পরিসেবার আওতাভুক্ত হবে।
সেইসঙ্গে খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করা যাবে না, শুধু বাইরে নিয়ে খাবার জন্য এবং অনলাইনে খাদ্য বিক্রয় করতে পারবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রজ্ঞাপনে নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া আগের সব বিধিনিষেধ ও নির্দেশনা বর্ধিত লকউনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হল:
১. সব সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন।
২. দোকানপাট/শপিং মল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট-শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট শপিং মল তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।
৩. এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাস, সেইসঙ্গে ট্রেন, লঞ্চের চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
৪. মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইলকোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
৬. কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাসমূহে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেড় মাস পেরিয়েছে চলমান বিধিনিষেধ
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথম দফায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। পরে তা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। এর মধ্যে শপিংমল খোলাসহ বেশকিছু বিষয়ে বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করে সরকার। সবশেষ ঈদের আগে ফের বিধিনিষেধ বাড়ানো হয় ১৬ মে পর্যন্ত। আজ রোববার (১৬ মে) আরও এক দফা বেড়ে বিধিনিষেধের মেয়াদ হলো ২৩ মে পর্যন্ত।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ঈদের আগে যেভাবে মানুষ চলাচল করেছে, তাতে সংক্রমণ বৃদ্ধি হতে পারে। ২৪ মের দিকে গিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। সে কারণে আরও কিছুদিন বিধিনিষেধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট
দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এ ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় ধরনের কারণে উদ্বিগ্ন দেশের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, আগামী ২২ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সংক্রমণ বাড়তে পারে।
ভারতের সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত
গত ২৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ২৬ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ১৪ দিন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। এরপর ৮ মে এই বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়। এ অবস্থায় ভারত থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ জনে। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩৬৩ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৮০ হাজার ১৫৯ জনে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ