কিছুদিন আগেও করোনার প্রকোপে কাঁপছিল আমেরিকা। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছিলেন বাইডেন। এখন সেই আমেরিকার সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলো, ভ্যাকসিন নেয়া শেষ হলে আর মাস্ক পরার দরকার নেই। ভিড়ের মধ্যেও তাদের মাস্ক পরতে হবে না।
এরপরই মাস্ক ছাড়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিক সম্মেলন করেন। বাইডেন জানিয়েছেন “কয়েক ঘণ্টা আগে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রিভেনশনের (CDC) তরফে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ ভ্যাকসিনেটেড মানুষের জন্য মাস্ক পরার দরকার নেই। ঘরে বা বাইরে কোথাও মাস্ক না পরার কথা জানিয়েছে তারা। আমার মনে হয় এটি বড় মাইলস্টোন। আমরা যে দ্রুত সব আমেরিকানদের ভ্যাকসিন দিতে সমর্থ হয়েছি, তার প্রতিফল এটা।
গত ১১৪ দিন ধরে আমাদের ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম বিশ্বকে এগিয়ে দিয়েছে। অনেকের মিলিতভাবে কঠোর পরিশ্রমের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। আমেরিকানদের হাতে ভ্যাকসিনের শট পৌঁছে দিতে যাঁরা পরিশ্রম করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, গবেষক, ওষুধ কোম্পানি, জাতীয় রক্ষী, আমেরিকার মিলিটারি, FEMA, গভর্নর, চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও আরও অনেকে।
সিডিসি কী বলেছে
সিডিসি-র ডিরেক্টর জেনারেল বলেছেন, ভ্যাকসিন পুরোপুরি নেয়া হয়ে গেলে ঘরের ভিতরে বা বাইরে মাস্ক পরার দরকার নেই। মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে মানুষ এখন থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন। তবে বদ্ধ জায়গায় বিশেষ করে প্লেন, বাস, মেট্রোতে মাস্ক পরতে হবে। আর যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ক্যান্সারের রোগী অথবা কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন, তাদের আগে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তারপর তারা মাস্ক ছাড়া ঘুরতে পারবেন।
কত মানুষ টিকা পেয়েছেন
অ্যামেরিকায় ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। ১৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অ্যামেরিকায় এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০২০ সালের এপ্রিলের থেকেও কম। সংক্রমণও কমেছে।
সিডিসি-র দাবি, ভ্যাকসিন কাজ করছে। ভাইরাসের সব প্রজাতির বিরুদ্ধে কাজ করছে। আর তাদের তথ্য বলছে, টিকা নেয়া মানুষের থেকে করোনা ছড়াচ্ছে না। তারা বিজ্ঞানকে অনুসরণ করছেন এবং টিকা নেয়া সম্পূর্ণ হলে মাস্ক না পরার কথা বলেছেন।
করোনায় শনাক্ত ১৬ কোটি ৩১ লাখের বেশি
এদিকে দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ কোটি ৩১ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ কোটি ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৭৩। এর মধ্যে ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৪ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার ১৪৬ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরইমধ্যে করোনার একাধিক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৬। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৩ জনের।
আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫। এর মধ্যে দুই লাখ ৭০ হাজার ৩১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার ৬১৩। এর মধ্যে চার লাখ ৩৪ হাজার ৮৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৬। এর মধ্যে ১২ হাজার ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ৮২৯। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ