আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। ওই ঘটনায় ছয়জন ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।
সেখানে ফিলিস্তিনিরা পাথর আর বোতল নিক্ষেপ করলেও ইসরায়েলি পুলিশ রাবার বুলেট এবং স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে।
রমজানের বিদায়ী জুমা উদযাপনের জন্য এর আগে সেখানে হাজার হাজার মুসলমান সমবেত হয়। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসার জন্য তারা সেখানে একটি অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল চালু করেছে।
ওই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার শঙ্কায় প্রতিদিনই সেখানে কলহের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম শ্রদ্ধার স্থান আল-আকসা মসজিদ। ইহুদিদের কাছেও এটি পবিত্র স্থান, যাকে তারা টেম্পল মাউন্ট হিসেবে মনে করে।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, সন্ধ্যার নামাজের পর ‘হাজার হাজার মুসলিম দাঙ্গা শুরু করলে’ তারা ‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য’ শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। জানা গেছে, আল-আকসা মসজিদের একজন কর্মকর্তা মসজিদের মাইকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলছে, মাইকে ওই ব্যক্তি বলেছিলেন- পুলিশ বাহিনী অবিলম্বে মুসল্লিদের উদ্দেশে স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ বন্ধ করুন। তরুণরা শান্ত হোন।
শুক্রবারের সহিংসতার পর সবাইকে উত্তেজনা প্রশমন করার আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সেই সঙ্গে জেরুজালেমের শাইখ জারাহ এলাকা থেকে উচ্ছেদের হুমকিতে ক্ষোভও বাড়ছে।
জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন যেন যেকোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয়। বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়” তিনি আহবান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ”উত্তেজনা বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগে” রয়েছে ওয়াশিংটন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলার বিষয়ে সোমবার ( ৯ মে) একটি শুনানি করতে যাচ্ছে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট।
এর আগে ৬মে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে ১৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
ফিলিস্তিনি শিশুদের সুরক্ষা বিষয়ক সংগঠন ডিসিআইপি জানিয়েছে, নিহত কিশোরের নাম সাইদ ওদেহ। ওদালা গ্রামের প্রবেশপথে একটি নিরাপত্তা চৌকি থেকে তার পিঠ লক্ষ্য করে দুই বার গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে এগিয়ে আসলেও তাতে বাধা দেয় তারা।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, ফিলিস্তিনিরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ায় পাল্টা গুলি চালিয়েছে সেনারা।
এদিকে পূর্ব জেরুজালেমের অবরুদ্ধ একটি গ্রামেও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। অবৈধ বসতি নির্মাণে বাধা দেয়া ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাসায়নিক মিশ্রিত পানি ছোঁড়ে তারা। এ সময় সংঘর্ষে আহত হয় অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি, গ্রেপ্তার করা হয় কমপক্ষে ১০ জনকে।
মার্চে সেটলারদের বসতি স্থাপনে সুবিধার জন্য শেখ জারাহ এলাকার ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে ঘর খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের ডিস্ট্রিক্ট আদালত। একই আদালত ১ আগস্টের মধ্যে আরও সাত ফিলিস্তিনি পরিবারকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
এ আদেশের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা আপিল করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালতের রায় দেয়ার কথা থাকলেও স্থগিত হয়েছে সেটি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই আইনি লড়াইয়ে ফিলিস্তিনিরা হেরে গেলে এলাকাটিতে তাদের ঘরবাড়ি দখলে আরও উৎসাহিত হবে ইসরায়েলিরা।
বিষয়টিকে জাতিগত নিধনের অংশ আখ্যা দিয়েছেন প্যালেস্টাইনিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ পার্টির মুস্তাফা বারঘুতি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪২৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ