লন্ডনে টিকা তৈরি করবেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনাওয়ালা। এমনকি লন্ডনে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে ৩৩ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগও করবেন তিনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই ঘোষণা করেছেন। এদিকে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে গঠিত কোভ্যাক্স উদ্যোগ চালাতে আরও ৪৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।
টিকার জন্য যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ
লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর ডাউনিং স্ট্রিটের কার্যালয় থেকে সোমবার (৩মে) একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, ২৪ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করবে সেরাম। যা প্রায় ৩৩ কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার। এই বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্রিটেনে টিকা তৈরির জন্য গবেষণা, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য করবে সেরাম।
মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসার কথা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারতের বাজারে নজর ছিল লন্ডনের। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, আদর এই বিনিয়োগ ভারতের সঙ্গে হওয়া তাদের ১০০ কোটি ডলারের চুক্তিরই একটি অঙ্গ, যা দু’দেশেই প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি করবে।
টিকা তৈরির সংখ্যার বিচারে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টিকা তৈরি করছে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া কম দামে টিকা তৈরির ব্যাপারেও বিশ্বের অন্য টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির থেকে এগিয়ে সেরাম। ব্রিটেনের সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে তৈরি তাদের করোনা টিকা কোভিশিল্ড বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে অল্পদামে পৌঁছে দিয়েছিল ভারত। তবে বর্তমানে দেশে টিকার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় আপাতত সেই সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতে করোনা টিকার আকালের মধ্যেই কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারী সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনেওয়ালা লন্ডন গিয়েছেন। ব্রিটেনে সেরামের সহযোগী ও অংশীদারদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। তার ফসল হিসেবেই এই বিনিয়োগ চুক্তি।
কোভ্যাক্সের দরকার ৪৫০০ কোটি ডলার
ন্যায্যতার ভিত্তিতে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে গঠিত কোভ্যাক্স উদ্যোগ চালাতে আরও অর্থ প্রয়োজন। আগামী বছর পর্যন্ত এই টিকা কর্মসূচি চালাতে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ তথ্য জানিয়েছেন।
কোভ্যাক্স (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি) উদ্যোগের যৌথ নেতৃত্বে রয়েছে ডব্লিউএইচও, স্বল্পমূল্যে টিকা দেওয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্যাভি, সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থা (সিইপিআই), জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ কোটি ৪২ লাখের বেশি মানুষ। করোনার তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুসারে, এই মহামারিতে মারা গেছেন ৩২ লাখের বেশি মানুষ। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১৩ কোটি ১৬ লাখ। এই মহামারি ঠেকাতে কোভ্যাক্স কর্মসূচি দৃশ্যমান হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। ওই মাসে ঘানায় প্রথম টিকা সরবরাহ করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ করছে তারা।
কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ ডোজ টিকা বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকাপ্রাপ্তির যে বিশাল ব্যবধান, তা এখনো বিদ্যমান। এই মহামারি ঠেকাতে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসসহ বিশেষজ্ঞরা। তবে ধনী দেশগুলো এগিয়ে না আসায় তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো কোভ্যাক্স কর্মসূচিকে উপেক্ষা করছে। তারা দ্রুত সব টিকা নিয়ে নিচ্ছে। যে পরিমাণ টিকা দরকার, তার চেয়ে বেশি টিকার ক্রয়াদেশও দিচ্ছে তারা।
তেদরোস আধানোম বলেন, বিশ্বজুড়ে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে গত এপ্রিলে। টিকার যে সংকট, তা কাটিয়ে উঠতে আগামী জুন নাগাদ দুই কোটি ডোজ টিকা দরকার কোভ্যাক্সের।
বিশ্বজুড়ে করোনা ঠেকাতে পাঁচটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে ডব্লিউএইচও। তবে সব টিকা পাচ্ছে না কোভ্যাক্স। শুধু ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ করছে কোভ্যাক্স। তবে মডার্না জানিয়েছে, কম দামে তারা কোভ্যাক্সকে ৫০ কোটি ডোজ টিকা দেবে। তবে এই টিকা এখনই পাওয়া যাবে না। টিকা মিলবে ২০২২ সাল নাগাদ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ