ভারতের গুজরাটে এক হাসপাতালে আগুন লেগে করোনায় সংক্রমিত অন্তত ১৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে গুজরাটের ভরুচ এলাকার একটি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা যান এই রোগীরা। এদিকে ভারতে গতকাল শুক্রবার রেকর্ড চার লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা হাসপাতালে আগুন
বিবিসি হিন্দি সার্ভিসের খবরে বলা হয়, গুজরাটের চারতলাবিশিষ্ট ওয়েলফেয়ার হাসপাতালে ৫০ জনের মতো রোগী ভর্তি ছিলেন। দিবাগত রাত একটার দিকে হাসপাতালটির কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে আগুন লাগে। সে সময় রোগীদের উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা ও অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। এর আগে ১২ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল।
বারুচের পুলিশ সুপার রাজেন্দ্রাসিন চৌদাসামা জানিয়েছিলেন যে, আগুনে দমবন্ধ হয়ে অন্তত ১২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, বাকি ছয়জন রোগী কি মারা গেছেন নাকি অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়।
বর্তমানে ওই হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বেশ কয়েকজন রোগীকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। কেন কীভাবে এই আগ্নিকাণ্ড হয়েছে, তা এখনো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারতে এক সপ্তাহের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে এটি তৃতীয় আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। এর আগের দুইটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রতিবেশী রাজ্য মহারাষ্ট্রে, সেখানে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে এই দুইটি রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এক দিনে রেকর্ড ৪ লাখ আক্রান্ত
চার লাখ ছাড়িয়ে গেল ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে তৈরি হল নতুন রেকর্ড। গোটা বিশ্বে এই প্রথম কোনও একটি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনে চার লাখ ছাড়াল। দৈনিক আক্রান্ত ৩ লাখ ছাড়ানোর ৯ দিনের মাথায় তা পৌঁছে গেল ৪ লাখে।
শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৫২৩ জনের। এদিকে করোনাকে হারিয়ে একদিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৮ জন। এখনও পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৯১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৯ জন, সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৬ জন।
ভারতে করোনা প্রাণ কেড়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৫৩ জনের। এই মুহূর্তে সেখানে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৭১০ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের চাপ সামলাতে পারছে না ভারতের নয়াদিল্লির শ্মশানগুলো। সারা রাত ধরে জ্বলতে থাকা চিতার আগুন যেন স্বজনদের কান্না আর আহাজারিকে ছাপিয়ে উঠেছে।
এদিকে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য উন্মুক্ত করা বর্তমান সময়ে জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, দেশটিতে মহামারির সেকেন্ড ওয়েভে নতুন আরও অভিযোজিত স্ট্রেইনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে গবেষণা, পূর্বাভাস ও সংক্রমণ কমাতে মহামারি সংক্রান্ত তথ্য উন্মুক্ত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন করেছেন দেশটির বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
আজ শনিবার থেকে তৃতীয় ধাপের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করছে ভারত। এদিন থেকে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। তবে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, রাজস্থান, ঝাড়খন্ড ও পাঞ্জাবের রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তাদের টিকার সংকট রয়েছে। ফলে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, রাজ্যগুলোর কাছে এখনো এক কোটি ডোজের বেশি টিকা মজুত আছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানাতেও পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দেশটিতে সংক্রমণের এই ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সংকটসহ নানা সমস্যায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। শুধু অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা গেছেন। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভারতের করোনা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা জরুরি চিকিৎসাসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিদেশি সহায়তা ভারতে পৌঁছানো শুরু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ