করোনার ভারতীয় ধরন রোধে বাংলাদেশ স্থলপথে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত ১৪ দিন বন্ধ ঘোষণা করলেও আটকেপড়া যাত্রীরা দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ফিরছেন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ২৫০ জন বাংলাদেশি। এ নিয়ে গত ৩ দিনে ভারত থেকে দেশে ফিরলেন ৬৮৯ জন। এ পর্যন্ত দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
ভারতের নতুন ধরনের করোনা ভ্যারিয়েন্ট কোনোভাবেই যাতে বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে সে-জন্য সীমান্ত ১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। তবে যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরছেন। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বুধবার (২৮ এপ্রিল) বিকাল পর্যন্ত সময়ে ভারতে আটকে পড়া ৪৩৯ জন বাংলাদেশি বেনাপোল স্থলপথে দিয়ে দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ৬৭ যাত্রী। আর বৃহস্পতিবার ২৫০ জন দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে তিন দিনে ভারতে আটকে পড়া ৬৮৯ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ১০৯ যাত্রী।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনারের ছাড়পত্র থাকায় নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বৃহস্পতিবার ২৫০ জন দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে তিন দিনে ভারতে আটকে পড়া ৬৮৯ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
ফেরত আসাদের বেনাপোলের সাতটি আবাসিক হোটেলে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম থাকা যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারবেন। কিন্তু যারা দেশে ফিরেছেন, তাদের বেশির ভাগের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের বেশি রয়েছে। যে কারণে যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম অবস্থায় পড়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আবু তাহের বলেন, “ভারতফেরত বাংলাদেশিরা বেনাপোল বন্দর এলাকার সাতটি আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন। সেখানে সব খরচ যাত্রীদের বহন করতে হচ্ছে। এছাড়া ছয়জন করোনা পজিটিভকে যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, বিপুল যাত্রী দেশে ফেরায় তাদের কোয়ারেন্টাইন নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। নির্ধারিত হোটেলে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে। খাবার দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের।
কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের ভোগান্তি
এদিকে চিকিৎসা শেষে হাতে খরচের টাকা না থাকায় ভারতফেরত বাংলাদেশিরা নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে অসহায় দিন পার করছেন বলে জানা গেছে। তবে সরকারি নির্দেশনা মানতে বাধ্য হয়ে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে।
ভারতফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখতে বিকল্প হিসেবে ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগা মাদ্রাসা ও যশোর শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে বেনাপোলের আবাসিক হোটেলগুলোতে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সরবরাহ নেই। খাবারের দাম বেশি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীরা।
চুয়াডাঙ্গায় বিশেষ পর্যবেক্ষণে ভারতফেরত আব্দুস সালাম
এদিকে ভারতফেরত চুয়াডাঙ্গার সিনেমা হল পাড়ার আব্দুস সালাম (৫১) করোনা আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের রেডজোনে চিকিৎসাধীন। বুধবার (২৮ এপ্রিল) করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাকে রেডজোনে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, গত রোববার যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হল পাড়ার নিজবাড়িতে ওঠেন আব্দুস সালাম। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একদিন অবস্থানও করেন। পরে সোমবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয় শহর জুড়ে। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা ওই রাতেই করোনা আক্রান্ত আব্দুস সালামকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শহরের সিনেমা হল পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুস সালাম গত ১ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে ভারতে যান। টানা ২২ দিন ভারতের দিল্লি, পাঞ্জাব ও কলকাতাসহ কয়েকটি রাজ্য ভ্রমণ করেন। এরই মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল রাতে শরীরে হালকা ব্যথা অনুভব করেন। একদিন পর গলাব্যথা ও কাশি শুরু হয়। পরদিন আব্দুস সালাম ভারতের কোলকাতার পিসিআর ল্যাবে নমুনা দেন। নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হন আব্দুস সালাম।
বিষয়টি গোপন করে তিনি পরদিন শনাক্তরত অবস্থায় পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে প্রবেশ করেন। সেখানে নাম-পরিচয় গোপন করে কোয়ারেন্টিন না মেনে চলে আসেন নিজ বাড়ি চুয়াডাঙ্গার সিনেমা হল পাড়ায়।
তবে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বর্তমানে ভারতের করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এরই মধ্যে ভয়াবহ কয়েকটি ধরনও শনাক্ত হয়েছে ওই দেশে। এজন্য ভারত থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভারতফেরত ওই ব্যক্তির শরীরে যদি ভারতের করোনার এই ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) জীবাণু থাকে তাহলে বড় বিপদে পড়তে হবে। কারণ তিনি কোয়ারেন্টাইন না মেনে ২৪ ঘণ্টা বাড়িতে অবস্থান করেছেন। সাধারণ অন্য মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগকে ভাবিয়ে তুলছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ