নওগাঁর পত্নীতলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুল আলমের নির্যাতনে হামিদুর রহমান (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৮ এপ্রিল) ভোররাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে হামিদুর রহমানের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে নিহতের স্বজনরা ওসি শামছুল আলমের বিচার দাবিতে মরদেহ নিয়ে পত্নীতলা থানা চত্বরে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বোরাম গ্রামের মৃত খোদা বক্সের পুত্র হামিদুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ফাহিমার পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এতে হামিদুর কয়েকদিন পূর্বে তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এ ঘটনায় হামিদুরের ২ ছেলে তাকে মারধর করলে তিনি থানায় অভিযোগ করেন। ১৭ এপ্রিল থানায় এক সমঝোতা বৈঠকে হামিদুর তার স্ত্রীকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
২৫ এপ্রিল হামিদুরের স্ত্রী ফাইমা থানায় গিয়ে অভিযোগে জানান, তার স্বামী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাকে এখনও গ্রহণ করেননি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একই তারিখে এসআই আশরাফুল ইসলাম সমঝোতার কথা বলে হামিদুরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় থানায় ফাহিমা ও হামিদুরের স্বজনও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা বৈঠকে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ওসি সামসুল আলম শাহ ক্ষিপ্ত হয়ে হামিদুরকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি এবং লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে হামিদুরের মাথা ইটের ওয়ালের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে আহত হামিদুরকে থানাহাজতে বন্দি করে রাখা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। হামিদুরের সঙ্গে থাকা খালাতো ভাই ফারুক হোসেন ও প্রতিবেশী নইমুদ্দিন আহত অবস্থায় তাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতেই তিনি গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসা করছিলেন।
২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হামিদুর রক্ত বমি শুরু করলে তাকে প্রথমে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনরা রাতেই অ্যাম্বুলেন্স যোগে লাশ পত্নীতলা থানায় নিয়ে আসেন। বুধবার সকালে লাশের ময়নাতদন্তের পর বিকালে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হামিদুরের খালাতো ভাই ফারুক বলেন, ওসির মারধরে দুইবার হামিদুরের মাথা ইটের দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় তিনি চরমভাবে আহত হন। ওসির মারপিটের ভয়ে হামিদুর স্ত্রীকে নিতে রাজি হলেও তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ওসির মারপিটের কারণেই হামিদুরের মৃত্যু হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে সুষ্ঠু বিচারের জন্য। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।
পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮টায় যখন হামিদুরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি রক্ত বমি করছিলেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
পত্নীতলা থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত ওসি শামসুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর এসবের সবকটাই ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা।
তারা বলেন, পুলিশে ঢোকার পর স্বাভাবিক একজনের ভেতরেও আশ্চর্য এক পরিবর্তন আসে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত ভেবে তারা যা ইচ্ছা তা করার মানসিকতা নিয়ে দাপটের সাথে চলতে থাকেন। ফলে ঘর থেকে বাহির কেউ তাদের কুৎসিত হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন আরও অসংখ্য অভিযোগ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ