করোনা ভাইরাস মহামারির সামনে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে ভারত। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, অক্সিজেন সংকটে রোজ মারা যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। শ্মশানগুলোতে দিনরাত জ্বলছে চিতার আগুন। মৃত্যুহারে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে শ্মশানগুলোতে দেখা দিয়েছে জায়গার সংকট। কম পড়ছে কাঠে। বন্ধ রাখতে হচ্ছে শ্মশানের দরজা।
সরকারি হিসাবে গত সাতদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন দেশটিতে। তবে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়ছে।
দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (এমসিডি) পরিচালিত ২৬টি শ্মশান ঘুরে এনডিটিভি জানতে পেরেছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত শহরটিতে ৩ হাজার ৯৬ জন করোনা রোগীর মরদেহ দাহ করা হয়েছে।
করুণ দিল্লি
সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি রাজধানী দিল্লিতে। শ্মশানগুলোতে মৃতদেহ পোড়ানোর জন্য আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। শেষকৃত্যের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পার্কিং লটগুলো। এমনকি জায়গা নেই কবরস্থানেও।
মৃতদেহ দাহ করার কাঠও ফুরিয়ে গেছে অনেক শ্মশানে। কাঠের অভাবে কেয়ারটেকারকে বন্ধ করে দিতে হয়েছে শ্মশানের দরজা।
করোনায় দৈনিক তিন শতাধিক মৃত্যুর গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়া দিল্লি এমন করুণ পরিস্থিতির মুখেই পড়েছে।
গত সপ্তাহে দিল্লিতে মৃত্যুর গড় হার ছিল ৩০৪। সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে মৃতের সংখ্যা ৩৫০। রোববার ৩৫৭ জনের প্রাণ গেছে। আগের দিন মারা যান ৩৪৮ জন।
দিল্লির অন্যতম একটি প্রধান শ্মশানে দৈনিক ২২ জনের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা আছে। আর আপাতত রোজই সেখানে ৬০ থেকে ৭০টি মৃতদেহ আসছে। চাপে পড়ে শ্মশানের আশপাশে আরও ১০০টি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হচ্ছে।
শ্মশানের কর্মীদের ওপর সম্প্রতি কাজের চাপ এতটাই বেড়ে গেছে যে মৃতের পরিবারের লোকজনকেও কাজে হাত লাগাতে হচ্ছে। প্রায় একই ছবি দিল্লির বাকি ২৫টি শ্মশান আর কবরখানায়। সারি দিয়ে কিংবা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে মৃতদেহ।
পশুর মতো মানুষ মরছে
ভারতে এখন মানুষ অস্থায়ীভাবে গণ সমাধি ও মরদেহ দাহ করাতে বাধ্য হচ্ছে কারণ করোনায় মৃত্যুহার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশটির মরদেহ দাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
দেখা গেছে, দেশটির ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যার সাথে তাল মেলাতে গ্যারেজেও চিতা সাজানো হচ্ছে। এদিকে দাহকার্যে নিয়োজিতরা রাত দিন কাজ করেও পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারছেন না বলে জানান।
জিতেন্দর সিং উত্তর পূর্ব দিল্লিতে একটি অলাভজনক মেডিকেল সার্ভিসের প্রধান, তার বাড়ির পাশেই মৃতদের সৎকারের জন্যে গ্যারেজে দাহকার্য করছেন। সংখ্যাটা এতো বেশি যে জায়গায় কুলানো যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এটা দেখা সত্যিই কষ্টকর। বিভিন্ন জায়গায় দাহ করার জন্য কাঠ কম পড়ছে বলে জানা গেছে।
জয়ন্ত মালহোত্রা দিল্লিতে দাহকার্যে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি।
‘বিশ্বাস হয় না, আমরা ভারতের রাজধানীতে আছি। মানুষ অক্সিজেন পাচ্ছে না। পশুর মতো মানুষ মরছে।’
এক অ্যাম্বুলেন্সে ২২টি মরদেহ
সম্প্রতি ভারতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ২২টি মরদেহ গাদাগাদি করে সৎকারের জন্য শ্মশানে নেয়ার ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে।
টুইটারে কয়েক সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মহারাষ্ট্রের বীড জেলার অম্বেজোগাইয়ের স্বামী রামানন্দ তীর্থ মরাঠাওয়াড়ায় সরকারি হাসপাতালের মর্গের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স।
তাতে করোনায় মৃতদের দেহ গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে। বস্তাবন্দি মরদেহ দাবিয়ে দাবিয়ে জায়গা তৈরি করে আরও দেহ রাখা হচ্ছে।
মরদেহ এভাবে গাদাগাদি করে তোলার সময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। মৃত রোগীর স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করলেও কেউ তাদের কথায় কান দেয়নি।
তারা অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ গাদাগাদি করে তোলার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে গেলে পুলিশ তা কেড়ে নেয়। মরদেহ সৎকার শেষে স্বজনদের মোবাইল ফেরত দেয় পুলিশ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ