করোনার টিকা পেতে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংকে টিকা কেনার আগ্রহপত্র পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পাঠানো এই পত্রে বলা হয়, দুই দেশ টিকার ক্ষেত্রে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বাড়াতে পারে। এদিকে সরকার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রথম ডোজ নেওয়া ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকাও।
চীন থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা
ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার পরই মূলত সরকার চীন থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা শুরু করল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দক্ষিণ এশিয়ায় টিকার জরুরি মজুত গড়তে চীনের উদ্যোগে গঠিত মঞ্চে যোগ দেওয়ার সম্মতির কথা জানায়। এরপর শনিবার চীনা দূতাবাসকে চিঠি দিয়ে টিকা পেতে আগ্রহের কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
চীন গত বছরের সেপ্টেম্বরেই তাদের দেশে উদ্ভাবিত দুটি টিকা পরীক্ষার আগ্রহ দেখিয়েছিল। একটি টিকার ৫ লাখ ডোজ উপহার দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ চীনা টিকার পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সময় নেয়। এর মধ্যে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসতে শুরু করে। শুধু কেনা নয়, ভারত বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩ লাখ ডোজ উপহারও দিয়েছে।
নিজেদের চাহিদা সামাল দিতে সম্প্রতি ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা আনা নিয়ে আলোচনা চলছে। টিকা পেতে বাংলাদেশ টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভিকেও চিঠি দিয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত শুক্রবার গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেথ বার্কলের কাছে দেওয়া এ চিঠিতে আন্তর্জাতিকভাবে টিকার সংগ্রহ ও বিতরণ উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১০ কোটি ডোজ টিকা কিনতে অর্থায়নের আগ্রহের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। চিঠিতে তিনি বলেন, দাতাদের আর্থিক সহায়তায় গ্যাভি বিনা মূল্যে যে টিকা দেবে, তার বাইরেও বাংলাদেশ টিকা কিনতে আগ্রহী।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একই দিন আরেকটি চিঠি দেওয়া হয় কোভ্যাক্সকে। এতে বলা হয়, কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশের জন্য ১০ কোটি ৯ লাখ ডোজ টিকা বরাদ্দ ছিল, যা মার্চ থেকে সরবরাহের কথা থাকলেও দেরি হয়েছে। আশা করা যায়, মে মাস থেকে সরবরাহ শুরু হবে। তবে বাংলাদেশ কোনো নিশ্চয়তা পায়নি।
চিঠিতে দেশে টিকাদান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ ৫৭ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছে। ১৯ লাখকে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ। এখন টিকার যে মজুত আছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে। এতে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। চিঠিতে জরুরি সংকট মোকাবিলায় অন্তত ৫ থেকে ১০ লাখ টিকা দেওয়ার জন্য কোভ্যাক্সকে অনুরোধ করা হয়।
অনিশ্চিত দ্বিতীয় ডোজের টিকা
বাংলাদেশে আজ সোমবার( ২৬ এপ্রিল) থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৬শে এপ্রিল সোমবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের প্রথম ডোজ টিকা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮০ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ২১ লাখ ৫৫ হাজার ২৯৬ জন। টিকা গ্রহণের জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ টিকা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ২০ লাখ টিকার মতো ঘাটতি আছে, তা–ও পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশা করছে।
অবশ্য গতকাল রোববার বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ডের টিকার পরের চালান কবে আসছে, তা নিশ্চিত নয়। সময়মতো ভারত থেকে টিকা না আসার কারণে সাধারণ মানুষ ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ ও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। সরকার যদি রাশিয়া বা চীনের টিকা আমদানি করে, তাহলে কি সেই টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে?
এখানে সমস্যা দুই ধরনের। প্রথমত দুই কোম্পানির টিকার দুই ডোজ নিয়ে সুফল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিষয়ে বৈশ্বিক কোনো গবেষণা এখনো বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে নেই। অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো পরীক্ষিত ফলাফল নেই। সুতরাং দুই কোম্পানির দুই ডোজ দেওয়া হবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর গ্রহীতাকে একটি সনদ দেওয়া হচ্ছে। কোন প্রতিষ্ঠানের টিকা দেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ থাকছে সনদে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে এ সনদ প্রয়োজনীয় দলিল হয়ে উঠছে। সে ক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানের দুই ডোজ দেওয়া হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
অন্য বিষয়টি আস্থার। সময়মতো দ্বিতীয় ডোজ না পেলে বা দুটি ডোজ একই কোম্পানির না হলে মানুষের আস্থায় চিড় ধরার আশঙ্কা আছে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ দিতে না পারার বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনার ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে। আর যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ পেলেন না, তাঁদের মন খারাপ হবে। তাদের সুরক্ষার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ