মহামারি করোনা ভাইরাসের ধাক্কা এখনো চলছে। বরং পূর্বের চেয়ে আরও বেশি শক্তিতে আছড়ে পড়ছে করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ। এতে স্বাভাবিকভাবেই থমকে আছে বিশ্ব অর্থনীতি। মহামারির কারণে থমকে যাওয়া বৈশ্বিক অর্থনীতি এ বছর ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে। তবে অর্থনীতির এ গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বাড়বে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিভিন্ন দেশের ৫০০ অর্থনীতিবিদ নিয়ে পরিচালিত জরিপের ফল নিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোর শক্তিশালী অবস্থানের ওপর নির্ভর করে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি ‘গত শতাব্দির ৭০ এর দশকের পর সবচেয়ে দ্রুত হতে পারে বলেও মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের এমন প্রত্যাশা কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, টিকাচালিত পুনরুদ্ধার কার্যক্রম, বিপুল পরিমাণ তারল্যের যোগান, অপ্রত্যাশিত বাজেট সহায়তা- প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপ এবং গতিশীলতা বজায় রাখতে পরিস্থিতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যক্রমের খাপ খাওয়ানোর ধারাবাহিকতা।
মার্চমাসজুড়ে চলা রয়টার্সের এ জরিপে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়লে অর্থনীতির গতি হারানোর শঙ্কার প্রশ্নে বিভক্ত মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ২০২১ সালে বিশ্বের ৪৪টি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে যাচ্ছে বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশই মত দিয়েছেন। এই হার তিন মাসে আগে পরিচালিত জরিপের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার গতি পেতে যাচ্ছে এবং এ বছর চীনের প্রবৃদ্ধির হারও মহামারিপূর্ব পর্যায়ে ফিরে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে অর্থনীতির গতি বাড়লেও সমানতালে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না বলেই ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বের উন্নত অর্থনৈতিক দেশগুলোর ওপর পরিচালিত এই জরিপে চলতি বছর বা পরের বছর বেকারত্বের হার মহামারিপূর্ব পর্যায়ে নেমে আসবে না বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এ বছর কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে এখনও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, করোনা মহামারির কারণে অনেককেই কর্মহীন থাকতে হতে পারে।
এইচএসবিসি ব্যাংকের গ্লোবাল চিফ ইকনোমিস্ট জ্যানেট হেনরি বলেন, ‘একটি সংহতিপূর্ণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকা প্রতিটি অর্থনীতিই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন দেখাবে।’
করোনা মহামারি গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিকে এর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার কবলে ফেলে দেয়। তবে এ জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, এ বছর একটি দ্রুত পুনরুদ্ধারও দেখা যাবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে, যা ১৯৭০ এর দশকের পর সবচেয়ে গতিময়। জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস ছিলো ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
রয়টার্সের জরিপে প্রাপ্ত প্রবৃদ্ধির হার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাক্কলিত ৬ শতাংশের চেয়ে সামান্য কম হলেও পর্যবেক্ষণে থাকা ৭৪টি অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে ৩০ শতাংশের প্রবৃদ্ধি আইএমএফের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হবে বলে এই জরিপে আশা করা হয়।
২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটা ঘুরে দাঁড়াবে, এমন কথা অনেকেই বলছে। তবে টিকাদান কর্মসূচির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে জাতিসংঘের হিসাবমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
২০২০ সালকে পেছনে ফেলে এসে ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে বলেই মনে করে জাতিসংঘ। তারা বলছে, এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪ শতাংশ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। পরের বছর বা ২০২২ সালে তা দাঁড়াবে যথাক্রমে ২ দশমিক ৫ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সিচুয়েশন প্রসপেক্টাস বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা শীর্ষক জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস করা হয়েছে।
কর্মসংস্থান বাড়াতে বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক
করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি দ্রুত কাটাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।
গতকাল বৃহস্পতিবার(২২ এপ্রিল) এ বিষয়ে চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বিশ্ব ব্যাংকের কাট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে তৃতীয় ও শেষ কিস্তিতে এ অর্থ পাবে বাংলাদেশ বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এ কর্মসূচির আওতায় গুনগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রমে সহায়তার সুযোগ থাকবে।
এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতি ও কাঠামোর আধুনিকায়ন, কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তার উন্নয়ন, তরুণ, নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মানসম্মত কাজ পাওয়ার জন্য এই অর্থায়ন ব্যয় করা হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড সভায় গত বছর ২৬ জুন এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইডিএ এই ঋণ দেবে।
এর আগে ২৫ কোটি ডলার করে দুই কিস্তিতে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থ ছাড় হয়। ৩০ বছর মেয়াদের এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড পাঁচ বছর।
বাজেট সহায়তার এই ঋণ কর্মসূচি ৫০ লাখ কর্মসংস্থান রক্ষায় সহায়তা করেছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেওয়ার বেলাতেও ভূমিকা রেখেছে। অভিবাসী জনশক্তিসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও এর সুফল পেয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চুক্তি সইয়ের পর ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, “মহামারীকালে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের সঙ্কট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা-উদ্যোগের সুরক্ষার কার্যক্রমও চলছে। এই কর্মসূচি কর্মসংস্থান রক্ষা এবং লাখো গরীব মানুষের আয় বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।”
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ