গত ৫০০ বছর ধরে পৃথিবীতে যেসব দেশের মুদ্রা রাজত্ব করছে তার মধ্যে রয়েছে পর্তুগাল, এরপর স্পেন, নেদারল্যান্ডস, তারপর ফ্রান্স এবং সর্বশেষ ছিল ব্রিটেনের মুদ্রা। এরপর থেকেই আমেরিকান ডলারের প্রভাব।
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে ডলার। বৈশ্বিক মুদ্রা ও বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় ডলারের দ্বারা। ডলার বিশ্বমুদ্রা ব্যবস্থার প্রধান বিনিময় মাধ্যম। তাহলে ডলার কিভাবে বিশ্বমুদ্রায় পরিণত হলো এবং তার বিরুদ্ধে এখনকার প্রধান বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব ঠিক কোথায় তা বুঝতে হলে বিশ্বমুদ্রা হিসেবে ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রক ভূমিকা বুঝতে হবে।
‘ডলার’ শব্দটির উৎপত্তি মধ্যযুগীয় ইউরোপে। ইউরোপের দেশগুলো দ্রুত অর্থ প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক উপায়ে হিসেবে এর উৎপত্তি ঘটায় এবং প্রতিটি ইউরোপীয় জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা-বান্ধব এর নাম দেয়। ইংল্যান্ড প্রথম এটাকে ‘ডালার’ বলতো এবং পরে শব্দটি ‘ডলার’ হয়ে উঠল।
আঠারো শতকের শেষের দিকে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যখন সক্রিয়ভাবে বিকাশ লাভ করছিল, তার নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাটির উত্থান শুরু হয়েছিল, তখন প্রথমদিকে ১৭৯৪ সালে ডলারকে রৌপ্যমুদ্রা হিসেবে তৈরি করত যার ওজন ছিল ২৭ গ্রাম। ১৭৯৭ সালে এই দেশটি কাগজের নোট জারি করতে শুরু করেছিল।
ডলারকে কেন্দ্র করে আমেরিকার অর্থনৈতিক শোষণ
বহু বছর ধরে পৃথিবীতে স্বর্ণের মানের ওপর নির্ধারিত হতো অর্থনীতি ও লেনদেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র দেশগুলোর কাছে যেসব সামরিক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করেছে সেগুলোর মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে স্বর্ণের মাধ্যমে। এর ফলে বিশ্বের মোট রিজার্ভের ৭০ শতাংশ স্বর্ণ চলে যায় আমেরিকার হাতে।
অন্যদিকে আমেরিকান ডলারের মূল্য নির্ধারিত ছিল তখন স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে। সে সময় ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আমেরিকাই ছিল একমাত্র দেশ যেখানে যুদ্ধের কোনো আঁচড় লাগেনি। এ ছাড়া ইউরোপ তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। যেহেতু তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আমেরিকার কাছে ছিল এবং স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে আমেরিকান ডলার স্থিতিশীল ছিল সেহেতু বিশ্বের ৪৪টি দেশ ব্রেটন উডস অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ডলারকে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে রাখতে একমত হয়েছে। সেই থেকে ডলারের আধিপত্য শুরু।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭১ সালে ঘোষণা করলেন, স্বর্ণের ওপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য আর নির্ধারিত হবে না। বিশ্বজুড়ে আমেরিকান ডলারের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এবং চাহিদা বাড়ানোর জন্য ১৯৭৪ সালে সৌদি আরবের সাথে একটি চুক্তি করে আমেরিকা।
বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণকারী একক মুদ্রা হিসেবে ডলারকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং টিকিয়ে রাখার মহৌষধ ছিল ডলারকে পেট্রোডলারে রূপ দিতে পারা। পেট্রোডলার আসলে কোনো ডলার নয়; আবার পেট্রোল নামক দাহ্য পদার্থও নয়। পেট্রোডলার মূলত ডলারের বিনিময়ে পেট্রোল ক্রয়ের চুক্তি যা বাদশা ফয়সাল ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মধ্যে ১৯৭৪ সালে করা হয়েছে।
এই চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরবকে বাধ্য করা হয়েছে ডলারকে সার্বভৌম বিশ্বমুদ্রা হিসেবে মেনে নিতে। অর্থাৎ পেট্রোল কেবলমাত্র ডলার দিয়েই কেনাবেচা করতে হবে, কোনো দেশীয় মুদ্রা দিয়ে নয়। এর বিনিময়ে আমেরিকা সৌদি বাদশাহকে গ্যারান্টি দেয় যে, যতদিন তারা পেট্রোডলার চুক্তি মেনে চলবে ততদিন সৌদি রাজ পরিবার ক্ষমতায় থাকবে।
এ ছাড়াও সৌদি মুদ্রার বিনিময় হার ০১ ডলার = ৩.৭৫ সৌদি রিয়াল বেঁধে দেয়া হয়। অর্থাৎ সৌদি অর্থনীতির যে অবস্থাই থাকুক আমেরিকার হস্তক্ষেপের কারণে ডলার ও রিয়ালের এই হার ওঠানামা করে না। সৌদি বাদশাহদের ক্ষমতায় থাকতে আরো একটি শর্ত দেয়, সেটা হলো, ওপেকভুক্ত সব দেশকে রাজি করানো যাতে তারা ডলার ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রা বা স্বর্ণের বিনিময়ে তেল বিক্রি না করে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব ছিল একক সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনকারী দেশ। সুতরাং সৌদি আরবের চুক্তির কারণে অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশকেও এই চুক্তি মেনে নিতে হয়েছে। সে মাফিক, ১৯৭৫ সালে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন, অর্থাৎ অন্যান্য দেশগুলো সৌদি আরবের মতোই সিদ্ধান্ত নেয়।
তেল হলো একটি পণ্য যা সব দেশের প্রয়োজন এবং আমদানি করতে হয় মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ডলারের মাধ্যমে। ফলে, প্রকারান্তে এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সব ব্যবসায়-বাণিজ্য যেন ডলার ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রায় না চলে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; হয়েছেও তাই। আমেরিকা সবসময়ই নিশ্চিত করতে চেয়েছে যেন কোনো দেশ এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে না যায়।
এই পেট্রোডলার নামক মুদ্রা ব্যবস্থার কারবারের ওপর বিশ্বব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় ধরে। আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে একচেটিয়া রাজত্ব করছে ডলার তথা পেট্রোডলার নামক এই দেশীয় মুদ্রাটি। জ্বালানি তেলের লেনদেনে ডলার ব্যবহারের মাধ্যমে সেই একচেটিয়াত্ব সর্বোচ্চ মাত্রায় উঠেছে। বহুকাল ডলার ছিল মুদ্রার স্থিতিশীলতার সমার্থক। এসবই বিভিন্ন দেশকে ডলারে রিজার্ভ রাখতে উৎসাহ জুগিয়েছে।
পতন ঘটছে ডলারের আধিপত্যের
ডলারের এই অর্থনৈতিক আভিজাত্যের রাজনৈতিক ফল ভোগ করেছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির শাসকরা বহুবার এ সুবিধাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে ভিন্নমতাবলম্বী রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে। ইরাক ও লিবিয়া এ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাদের কী ভয়ানক দশা ঘটেছে আমরা সবই এখন জানি।
আমেরিকা এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছে না, এসব বৈদেশিক মুদ্রা ডলার ও ইউরোতে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়াও রাশিয়ার প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম রিজার্ভ।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনের যোগাযোগব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে তাদের অনেক ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাশিয়া এ মুহূর্তে ডলারভিত্তিক আন্তর্জাতিক লেনদেনব্যবস্থা থেকে অনেকখানি বাইরে। এর আগে গত কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে ব্যাপকভিত্তিক এক বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়েছে।
সর্বশেষ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যিনি ২০১৯ পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহারের চুক্তি করেন। এই চুক্তিতে সেমিকন্ডাক্টর, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, সম্প্রচার যন্ত্রপাতি কেনার কথা ছিল। আমেরিকা অসন্তুষ্ট হলেও চুপ ছিল; কারণ এই চুক্তিতে তেল অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
তেলের জন্য পাকিস্তানি রুপি-রাশিয়া রুবল চুক্তি করার প্রক্রিয়া ঘটছে ২০২২ সালে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছুতেই এই চুক্তি হতে দিতে পারে না। কারণ অন্যান্য দেশ ইমরানকে অনুসরণ করলে মার্কিন ডলার দুর্বল হবে এবং পেট্রোডলারের জারিজুরি মুখ থুবড়ে পড়বে। মার্কিন অর্থনীতি দুর্বল হবে।
সুপার পাওয়ার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয় হচ্ছে। যদি এই চুক্তি হয়ে যেত তাহলে পাকিস্তান মার্কিন দাসত্বের নিগড় থেকে বেরিয়ে আসত। সেই জন্যই তড়িঘড়ি অপসারণ করতে হয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রীকে। এভাবে ডলার বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে আক্রমণ করে থাকে।
এই আক্রমণে তারা কখনো ইউরোপ, কখনো ন্যাটোকে সহযোগী হিসেবে নিয়েছে এবং বিনিময়ে ‘পাউন্ড’ ও ‘ইউরো’কে কিছুটা সুবিধা দিয়েছে তবে পেট্রোল বিনিময়ের মাধ্যম হওয়ার সুযোগ দেয়নি।
এই ঘটনার পর পৃথিবীর অনেক দেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসেবে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারে বলে তারা মনে করছেন। তবে সেটি এখনই হচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের আধিপত্য কমে আসতে হয়তো আরো কয়েক দশক পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের পরে সেটি নিয়ে অনেকের মধ্যেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বলে বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে ধীরে ধীরে ডলারের একচেটিয়া অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করছে। কারণ রাজনৈতিক স্বার্থে ডলারকে ক্রমাগত মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে অনেক দেশ এখন ত্যক্তবিরক্ত। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়া পর্যন্ত সবার ডলার-রিজার্ভ ইচ্ছেমতো আটকে দিচ্ছে, তাতে মধ্যপন্থী দেশগুলোর ভেতরও ভয় ঢুকেছে।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ডলার এখন এক বিষাক্ত মুদ্রার নাম। এ রকম ভীতিকে কাজে লাগিয়েই ডলার আধিপত্যের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে চায় বিভিন্ন দেশ। রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান এমনকি ভারতও এই প্রতিরোধের শরিক।
সৌদি আরব এবং চীন গত ছয় বছর যাবৎ আলোচনা করছে যাতে চীনের কাছে সৌদি আরব যে তেল রফতানি করে সেটির মূল্য ডলারে পরিশোধ না করে, চীনের মুদ্রা ইউয়ান-এ পরিশোধ করা যায় কি না! ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এ আলোচনা আবার নতুন করে সামনে এসেছে। উল্লেখ্য, সৌদি আরব যত তেল রফতানি করে তার ২৫ শতাংশ যায় চীনে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব
রাশিয়াও এখন নতুন করে ভাবছে, তাদের তেল কেন রুবলে বিক্রি করবে না? সে মাফিক তারা পদক্ষেপও নিয়েছে। দেশটি বলছে, যারা তাদের কাছ থেকে তেল-গ্যাস কিনবে তাদের মূল্য পরিশোধ করতে হবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে। চীন ও রাশিয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ডলারের বিকল্প হিসেবে নতুন একটি বৈশ্বিক মুদ্রা চালুর কথাও বলছে। চীন এবং রাশিয়া চায় ডলারের বিকল্প হিসেবে এমন একটি মুদ্রা হোক যেখানে কোনো দেশের প্রভাব থাকবে না।
ডলারের আধিপত্য কমাতে হলে রাশিয়া ও চীনের সামনে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হলো, পণ্য বিনিময়ে সব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য একক কোনো মুদ্রা বাছাই করা। এমনকি একাধিক মুদ্রার নতুন বিনিময় ব্যবস্থার কথাও ভাবছে এসব প্রতিবাদী বিদ্রোহী শক্তি, যাতে আসন্ন আন্তর্জাতিক বিনিময় ব্যবস্থাটি একক কোনো দেশকে রাজনৈতিক আধিপত্যের সুযোগ করে না দেয়। পাশাপাশি ওই সব মুদ্রায় লেনদেনের জন্য নতুন আরেক বার্তা বিনিময় ব্যবস্থাও লাগবে, যা ‘সুইফট’-এর বিকল্প হবে।
রাশিয়া ও চীন নিজেদের মধ্যে ইতোমধ্যে ‘সুইফট’-এর বিকল্প বার্তাব্যবস্থা কায়েম করে নিয়েছে এবং সেই ব্যবস্থায় আশপাশের অনেক দেশকে শামিল করতে তৎপর। ভারত ইতোমধ্যে এসপিএফএস নামে পরিচিত রাশিয়ার ফিন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেমে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। ২০১৭ সাল থেকে লেনদেন চলতে থাকা এই ‘এসপিএফএস’ দ্রুত শামিল হতে চলেছে চীনের সিআইপিএসের (ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম) সাথে।
ডলারভিত্তিক আধিপত্যের জগৎ এড়াতে রাশিয়ার সাথে চীন ও ভারতের লেনদেন ব্যবস্থার সমন্বয়ের চেষ্টা এখন মোটেই আর আলোচনার টেবিলে আটকে নেই; বরং সেটা অনেক বাস্তব চেহারা নিচ্ছে।
ভারত ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রুশদের সাথে ২০১৮ সালে চুক্তি হওয়া পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে রুপি-রুবল বিনিময় ব্যবস্থায়। অস্ত্র ছাড়াও সারের মতো জরুরি আমদানি পণ্যের সরবরাহ বাধামুক্ত রাখতেও রাশিয়ার সাথে সুইফটের বিকল্প ব্যবস্থায় ঢুকতে হচ্ছে ভারতকে। বিশ্বজুড়ে এ রকম প্রবণতাগুলোরই মিলিত ফল হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক সেটেলমেন্টে ডলারের হিস্যা’ ইতোমধ্যে অনেক কমেছে বলেই তথ্য মিলছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অবস্থানের বড় এক পটভূমি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে মাঝখানে রেখে বিশ্বকে দু’ভাগ করতে চাইছে ওয়াশিংটন। এই ভাগাভাগির কেন্দ্রে তাদের বড় লক্ষ্য অবশ্যই ডলারের একচেটিয়াত্ব ধরে রাখা।
যেসব দেশ রাশিয়া, চীন, ইরান বা ভেনিজুয়েলার সাথে নিজ মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইছে বা চাইবে, তারা নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক কূটনৈতিক চাপের শিকার হবে এ সময়। সেই চাপ কখনো আসবে মানবাধিকার পরিস্থিতির আদলে, কখনো রাজনৈতিক গণতন্ত্রের আকুতির আড়ালে যদিও এ দু’টিও জরুরি।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শুরু হওয়া নবপর্যায়ের এ টানাপড়েন ইউক্রেন যুদ্ধকেও দীর্ঘায়িত করবে। এ যুদ্ধের ফলাফলে এখন আর কেবল ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নয়, বৈশ্বিক পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, তারও নিষ্পত্তি নির্ভর করছে।
অনেকে মনে করছেন, এ যুদ্ধের ফায়সালা হবে সমরবিদদের হাতে নয়, অর্থনীতিবিদদের দ্বারা। কিয়েভকে ঘিরে চলতে থাকা ধ্বংসলীলা বন্ধ হলেও এ যুদ্ধের আড়ালে শুরু হওয়া বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থা গড়ার মূল যুদ্ধ থামবে না। সার্গেই গ্লাজিয়েভ ও আলেক্সান্ডার দুগিনরা এ যুদ্ধকে ওদিকেই নিতে চেয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গীতা গোপিনাথ সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার ওপর অবরোধ দীর্ঘমেয়াদি হলে সেটি আমেরিকান ডলারের জন্যই খারাপ হবে।
আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান সাচি সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ১৯২০ সালের দিকে ব্রিটিশ পাউন্ড তাদের আধিপত্য হারানোর আগে যে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল এখন আমেরিকান ডলারের ক্ষেত্রেও সেটি হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০০৫
আপনার মতামত জানানঃ