বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে মোট মারা গেছেন ১১২ জন।
এর আগের তিনদিন ধরেই প্রতিদিন ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মোট ১০ হাজার ৪৯৭ জনের মৃত্যু হলো। বাংলাদেশে গত তিনদিনের মৃত্যুহার বিবেচনা করলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রতি ১৫ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। এপ্রিল মাসের মৃত্যু হার বিবেচনা করলে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে এই মাসে প্রতি ১৮ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে রোগীর চাপও বাড়ছে সব হাসপাতালে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে হাসপাতালের শয্যা সংকট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১৮ এপ্রিল রোববার ঢাকার মহাখালীতে দেশের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সার্বিক সহযোগিতা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গতকাল ১৯ এপ্রিল সোমবার থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে ১৫০ জন চিকিৎসক হাসপাতালে যোগদান করেছেন, নার্স যোগদান করেছেন ২০০ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যোগদান করেছেন ৩০০ জনের মতো। এছাড়া এই হাসপাতালে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রায় ১৫০ জন চিকিৎসক ও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কর্মীরা সহযোগিতা করছে।
কিছুক্ষণ পরপরই হাসপাতালে করোনা রোগী আসছে। যেসব রোগী ভর্তি হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এসেছেন। তবে এক সপ্তাহ পর হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের (ডিএনসিসি) মহাখালী কাঁচাবাজারের ছয় তলা বিশিষ্ট এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ফাঁকা ভবনে এই হাসপাতাল চালু করা হলো। এতদিন মার্কেটটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হলেও পৃথকভাবে ওই সেবা কার্যক্রমগুলো চলবে। এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স, ৭০০ স্টাফ এবং ওষুধ, বিভিন্ন সরঞ্জামের ব্যবস্থা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে , রবিবার( ১৮ এপ্রিল) দুপুর ১২ টার দিকে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেছিলেন, গত দেড় মাসে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হার। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ খোলা আকাশের নিচে তাবু টানিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই জায়গায় আমরা একটি উন্নত পরিবেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
যেসব সুবিধা থাকবে হাসপাতালটিতে
ছয় তলা ভবনটি প্রায় ২২ বিঘা জায়গার ওপর তৈরি করা হয়েছিল। পুরো হাসপাতালটিতে শুধু করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য এক হাজারের বেশি শয্যা রয়েছে।
এই হাসপাতালে থাকবে:
আইসিইউ সুবিধাসহ ২১২টি শয্যা – ১১২টি আইসিইউ এবং ১০০টি এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট)
বিশেষ সুবিধাসহ ২৫০টি শয্যা – এই শয্যাগুলোতে কেন্দ্রীয় ভাবে অক্সিজেন দেয়ার এবং হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সুবিধা থাকবে
ডেডিকেটেড ৪৮৮টি শয্যা – এই শয্যাগুলোতে সিলিন্ডার এবং অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকবে
জরুরি বিভাগে ৫০টি শয্যা
ডায়ালাইসিস সুবিধা সহ ৪টি শয্যা
গত বছর ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের জায়গা ও অবকাঠামো ব্যবহার করে একটি বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতাল তৈরি করেছিল সরকার। সেসময় ঐ হাসপাতালটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতাল বলে বলা হচ্ছিল। তবে দুই হাজার শয্যার ঐ হাসপাতালটি মূলত আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেখানে কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণ, আইসিইউ সুবিধা বা ভেন্টিলেটর থাকলেও কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় তা ব্যবহৃত হয়নি।
পরে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে কোভিড সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়ায় এবং হাসপাতালে রোগী কমে যাওয়ায় ঐ হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণার নির্দেশনায় বসুন্ধরা গ্রুপকে হাসপাতালে ব্যবহৃত বেড এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ