আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউনের আওতায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ রয়েছে। এতে আটকা পড়েছেন অনেক বিদেশগামী। বিশেষ করে শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপদে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যেও ৫ দেশে গমনেচ্ছু যাত্রীদের জন্য শিগগিরই বিশেষ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ বিষয়ে বিস্তারিত ওয়ার্ক প্ল্যান বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) নিশ্চিত করবে।
ওই ৫ দেশ হচ্ছে- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। ফলে আটকা পড়েছেন অনেক বিদেশগামী। বিশেষ করে শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপদে। এ অবস্থার মধ্যে সরকারের এক সভায় এসব দেশের যাত্রীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব; সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পদস্থ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এয়ারপোর্টে আনার দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সির ওপর বর্তাবে।
সভায় জানানো হয়, প্রবাসী কর্মীরা কেবল জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ মিশনের ছাড়পত্র গ্রহণ করে এবং দেশে প্রযোজ্য কোয়ারেন্টিন শর্ত মেনে কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানিয়েছেন, অনেকে টিকেট কেটে রেখেছেন, আবার অনেকে সেখানে গিয়ে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং দিয়েছেন। তারা যেহেতু যাবেন সে কারণে আমরা তাদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মূলত লকডাউনের সময়ে বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের গন্তব্য দেশে যাওয়ার বিষয়ে আজ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কর্মী তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে টিকিট কিনেছেন। এমন সময় হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় এ কর্মীদের বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
করোনার প্রভাবে গত বছর প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল বিদেশে যাওয়া। ওই সময় বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাংলাদেশে থেকে কোনো কর্মী পাঠানো যায়নি। এরপর চার মাস ধরে বিদেশে কর্মী যাওয়া আস্তে আস্তে বাড়ছিল। কিন্তু নতুন করে আবার যদি বন্ধ হয়ে হয়ে যায় তাহলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সেটা বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে বাড়তে থাকা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গত সোমবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এর আগেই গত রোববার এক প্রজ্ঞাপন দিয়ে ১৩ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ফ্লাইট বন্ধের কথা জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গেছে মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার। ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এ বছর শুরুটা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে গেল। সরকারের সিদ্ধান্তে বিদেশি নিয়োগদাতারাও অবাক হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের দেশ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ফের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। আর এটি হলে আবার লম্বা সময়ের জন্য কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, নভেম্বরে চালু হলেও গত ডিসেম্বর থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানো বাড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরে গেছেন ২৮ হাজার ৩৯৮ জন। জানুয়ারিতে ৩৫ হাজার ৭৩২, ফেব্রুয়ারিতে ৪৯ হাজার ৫১০ এবং মার্চে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন।
প্রবাসীদের কথা ভেবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছিল ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) ও জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা)। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার দাবি জানিয়ে তারা বলেছেন, হাজার হাজার বিদেশগামী কর্মী টিকিট নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকলে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ