সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। গতকাল (১৩ এপ্রিল) মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় তিনটি বসতবাড়ি ও মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে ৬০-৭০ জনের একটি দল। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। তাদের মধ্যে ৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার (১৪ এ্রপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোবিন্দ বাউলিয়া বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে দুর্বৃত্তরা ওই হামলা করেছে। যদিও থানা-পুলিশ বলছে, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের শ্রীপদ মন্ডলের ছেলে পল্লব মন্ডলের নেতৃত্বে ৫/৬টি মটর সাইকেলে বংশীপুর থেকে আসা তরুণরা সরাসরি এ হামলায় অংশ নেয়। পল্লব মন্ডল শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ এর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন শাখার সম্পাদকীয় পদে রয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আকবর পাড়ের বাড়ি থেকে হামলায় অংশগ্রহণকারীদের ইট-পাটকেল সরবরাহ করা হয় বলেও স্থানীয়দের দাবি।
হামলার শিকার সুভাষ বাউলিয়ার স্ত্রী পূর্ণিমা বাউলিয়া বলেন, উত্তর কদমতলা ফুলতলা এলাকার শ্রীপদ মন্ডলের ছেলে পল্লব মন্ডল (১৯) এই ঘটনা ঘটায়। প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে পল্লব ও এক মেয়েকে একটি বিলের ভিতরে সুভাষ বাঊলিয়ার ছেলে মিলন বাঊলিয়া (১৮) সহ কয়েক জন ধরে ফেলে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু ওই ঘটনার রেশ ধরে পল্লব ৫/৭ টা মোটর সাইকেলে লোকজন নিয়ে এসে সন্ধ্যায় আমাদের ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় ভয়ে আমরা পলাই। এসময় আমাদের না পেয়ে তারা আমাদের দুই মেয়ে বিজুলী ও মমতা কে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাত ধরে টেনে ঘরের বাইরে বের করতে চাইলে ছোট মেয়ে চিৎকার করলে ওর বাবা, দাদা, কাকারা আর পালিয়ে না থাকতে পেরে বেরিয়ে আসে। তখনই তারা আমাদের উপর ইট ছুড়ে মারতে থাকে এবং ঘরে থাকা টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ও মোটর সাইকেল নিয়ে যায়। আর কিছু লোক তাদের তাড়া করে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করে। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পিছনে আজগর মেম্বারের সহযোগীতা রয়েছে।
হামলার শিকার গোবিন্দ বাউলিয়া জানান, হামলাকারীরা ইট পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে বাড়িতে ঢুকে পড়ে তার ভাইয়ের মেয়েকে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় বাঁধা দিতে যেয়ে তার ভাইসহ পরিবারের ১০/১১ জন সদস্য আহত হয়।
স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল জানান, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গোটা এলাকায় আতংক ভর করছে। ইতিমধ্যে কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলার বর্ণনা জানার চেষ্টা করছেন।
এদিকে হামলার বিষয়ে জানার জন্য ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর পাড়ের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে বন্ধ পাওয়া যায় পল্লব মন্ডলের ব্যবহৃত মুঠোফোন।
ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা কদমতলা গ্রামে যান। এর আগেই হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়।
ওসি নাজমুল হুদা বলেন, প্রেমঘটিত একটি বিষয় নিয়ে ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্তরা দুটি বসতবাড়ি ও একটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। তারা কয়েকজনকে মারধর করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। ওই ঘটনায় জড়িত লোকজনকে ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। তারা মনে করেন, সাম্প্রদায়িক কিছু ব্যক্তি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে পারে। এ ব্যাপারের প্রশাসনসহ সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। তারা জানান, দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আতঙ্কে থাকারই কথা।
দেশের সরকার ও প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ক্রমাগত অসহযোগিতা তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এলাকার প্রত্যেক পরিবারকে নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিতসহ কারা এই আক্রমণ চালিয়েছে এব্যাপারেও তদন্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবে প্রশাসন ও সরকার এবিষয়ে কতটা সহযোগিতাপরায়ণ হবে এবিষয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন।বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও৷ নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না বলে তাদের অভিযোগ৷
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ