
সর্বাত্মক ‘লকডাউনে’ অবশেষে ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘লকডাউনের’ দিনগুলোতে (সরকারি ছুটি ছাড়া) ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। তবে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
এই সময়ে ব্যাংকের স্থানীয়, প্রধান শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা ও জেলা সদরের ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা (এডি শাখা না থাকলে) খোলা রাখতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) রাতে এসংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে জারি করা নির্দেশনাগুলো হলো-
১. ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া ব্যাংকিং সময়সূচি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা নির্ধারণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা ও প্রধান কার্যালয় দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
২. বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় ও প্রধান শাখাসহ সব অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা ও জেলা সদরে ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা খোলা রাখতে হবে। এ সময় উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রবিবার ও মঙ্গলবার খোলা রাখতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে আনা নেওয়ার জন্য ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. গ্রাহকদের সব ধরণের জমা এবং উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট-পে অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় ভাতা, অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর, এনআরবি বন্ডে এবং বিভিন্ন প্রকার জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেটের মেয়াদ পূর্তিতে নগদায়ন ও কুপনের অর্থ পরিশোধ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউটিলিটি (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন) বিল নেওয়াসহ বাংলাদেশে ব্যাংকের চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের বা ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর (পোর্ট ও কাস্টমস) এলাকায় ব্যাংকের শাখা, উপশাখা, বুথগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. বিধিনিষেধ চলাকালে যে সব শাখা বন্ধ থাকবে সে সব শাখার গ্রাহক সেবা খোলা রাখা শাখার মাধ্যমে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্ধ শাখার গ্রাহকদের সেবা পাওয়ার বিষয়ে জানাতে ওই শাখার দৃশ্যমান স্থানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সব খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোস্টারিং করে প্রয়োজনীয় ও সীমিত লোকবল দিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. এটিএম ও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালুর সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা নেওয়া এবং বুথগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ‘বিধি-নিষেধের আওতায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছে সরকার। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কিন্তু এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠার পর মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক
কঠোর লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকবে—এমন খবরে গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে। যদিও পরে লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রখর রোদ ও গরম উপেক্ষা করেই গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় লেনদেন করতে আসেন ব্যাংকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময় কিছু শাখায় গ্রাহকরা চাহিদামতো টাকা না পাওয়ার অভিযোগও করেন। ব্যাংকের পাশাপাশি এটিএম বুথেও গ্রাহকদের টাকা তুলতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়তি ভিড় দেখা গেছে। ব্যাংকাররা জানান, সর্বাত্মক লকডাউনে ব্যাংক বন্ধের খবরে গ্রাহকরা নগদ টাকা তুলতেই বেশি ভিড় করেন। এমন ভিড় ঈদের আগে কার্যদিবসগুলোতে দেখা যায়। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা থাকায় কয়েক দিন ধরেই ব্যাংকপাড়ায় গ্রাহদের বাড়তি ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে সর্বাত্মক লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার লেনদেনের সময় বাড়িয়ে ৩টা করা হলেও নগদ টাকা তোলাসহ প্রয়োজনীয় লেনদেন সারতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে গ্রাহকদের। সরেজমিনে মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা ও কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টার আগেই ব্যাংকের বাইরে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে এই ভিড় আরো বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ ব্যাংকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহককে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। গ্রাহকের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সোনালী ব্যাংকে টাকা তুলতে আসেন গ্রাহক জাকির শেখ। তিনি বলেন, ‘কঠোর লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তাই নগদ টাকা তোলার জন্য এসেছি। কিন্তু প্রচুর ভিড় দেখতে পাচ্ছি। জানি না টাকা তুলতে আর কত সময় অপেক্ষা করতে হবে।’
রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে গ্রাহকদের ভিড় বেশি ছিল। ফলে লেনদেনের নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় গ্রাহকদের সেবা দিতে হয়েছে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহকদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে।’ তিনি জানান, নগদ টাকা তোলা ও সঞ্চয়পত্র ভাঙানো এবং এর মুনাফা তুলতেই বেশির ভাগ গ্রাহক ভিড় করেন। এ রকম ভিড় ঈদের আগে দেখা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ