করোনা সংক্রমণ রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। রোববার (১১ এপ্রিল) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত রেমডেসিভির ইনজেকশন ও এটি তৈরির উপাদান রপ্তানি করা যাবে না।
আরও বেশি মানুষ যেন রেমডেসিভির পায় সেজন্য ভারত সরকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ওয়েবসাইটে এই ওষুধের আড়তদার ও বিতরণকারীদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। সরকার আরও জানায়, ‘রেমডেসিভিরের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ওষুধ বিভাগ স্থানীয় উৎপাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’
মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েডের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ভারতের সাতটি কোম্পানি রেমডেসিভির উৎপাদন করে। প্রতি মাসে প্রায় ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট রেমডেসিভির উৎপাদন করা হয় ভারতে। ন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট প্রটোকল ফর কোভিড–১৯–এর আওতায় দেশটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহৃত হয়। মানুষের শিরায় ইনজেকশন হিসেবে এ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। রোগের তীব্রতার ওপর এর ডোজ নির্ভর করে।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে ভারত সরকার ওষুধটির উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ নিয়ে হালনাগাদ তথ্য নিজ নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে রেমডেসিভিরের বেআইনি মজুত নিয়ন্ত্রণ ও কালোবাজারি রুখতে নজরদারি জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। সম্ভাব্য সংকট এড়াতে রেমডেসিভিরের উৎপাদন বাড়ানোতেও জোর দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মার্চের শেষের দিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা দ্বারা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। নিজেদের দেশে বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
ভারতে এক দিনে করোনা শনাক্তের নতুন রেকর্ড
এ নিয়ে ভারতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৫ জনের করোনা শনাক্ত হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় ৮৩৯ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মারা গেছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৫ জন। করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ব্রাজিল দ্বিতীয়। ভারতে গত ৫ দিন ধরে ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখের বেশি করে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
গতকাল দেশটিতে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। সেই হিসেবে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনা শনাক্তের পরিমাণ ৫ শতাংশ বেড়েছে।
করোনা পরিস্থিতির অবনতির মুখে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে সান্ধ্যকালীন কারফিউ জারিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাতে পাঁচটি রাজ্যের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। রাজ্যগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ ও কেরালা। মোট শনাক্তের ৭২ দশমিক ২৩ শতাংশ এসেছে এই পাঁচ রাজ্য থেকে। অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, গুজরাট প্রভৃতি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিও খারাপ। পরিস্থিতি সামাল দিতে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার লকডাউন দিতে পারে।
রাজধানী নয়াদিল্লির পরিস্থিতিও অবনতিশীল। দিল্লি সরকার শনিবারই নানা বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার থেকে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এই কারফিউ চলবে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে।
করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, ভারতে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আগামী কয়েক সপ্তাহ হবে খুবই আশঙ্কাজনক সময়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১১৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ