পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করে দক্ষিণবঙ্গের উপর। আর দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের এখনও একক আধিপত্য। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে দাপট দেখাতে পারলেও দক্ষিণে তৃণমূলের ঘাঁটিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। যদিও বিজেপি এই অঞ্চলে তাদের ভোটার সংখ্যা বাড়িয়েছে। আর তা যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া এবং হুগলিতে আছে ১০৯টি আসন। এগুলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই আসনগুলোই পরবর্তী সরকার নির্ধারণ করতে পারে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলাগুলো তার আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া। অন্যদিকে, বিজেপিও বাংলার ক্ষমতায় বসতে দক্ষিণেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব আসনের একটি অংশে তৃতীয় দফায় ও আজ শনিবার চতুর্থ দফায় কিছু অংশে ভোট হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় বাকি অংশে ভোট গ্রহণ করা হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহ এখন কলকাতায় আছেন। সেখানে গতকাল শুক্রবার তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভবানীপুরে যান। সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগণার হাওড়া, জগৎদল এবং মধ্যমগ্রামে যান অমিত শাহ। সুতরাং, কোন অঞ্চলগুলো এখন তার ফোকাসে তা এখানে স্পষ্ট।
ইন্ডিয়া টুডের তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় ১০টি আসন, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ৩২টি, উত্তর ২৪ পরগণা ৩৩টি, হাওড়া ১৬টি এবং হুগলির ১৮টি আসন আছে। সবমিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ১০৯টি। অর্থাৎ এই জেলাগুলো রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১০৯টি দখল করে আছে। এগুলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি এবং এগুলোই পরবর্তী সরকার নির্ধারণ করতে পারে।
তৃণমূলের একক আধিপত্য
২০১৬ সালের নির্বাচনে এখানে ছড়ি ঘুরিয়েছিল তৃণমূল। পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ ভোট। ১০৯টি আসনের মধ্যে ৯৮টিতে জিতেছিল তৃণমূল। ওই সময়ে প্রধান বিরোধী দল ছিল বাম-কংগ্রেস জোট। তারা ১১টি জিতেছিল এবং বিজেপি মাত্র একটি আসনে জিতেছিল।
এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কিছুটা উন্নতি হলেও তৃণমূলের ভোট মাত্র এক শতাংশ কমে ৪৮ শতাংশে নেমেছিল। তবে ২০১৬ এর থেকে ১৩টি আসনে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল।
তৃণমূলের আসন সংখ্যা ২০১৯ সালে ৮৫টিতে নেমে আসে। একই সময়ে বিজেপি কলকাতার তিনটি, রাশবেহারি, জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুরসহ ২৪টি বিভাগে এগিয়ে ছিল।
বিজেপির ভোট বৃদ্ধি
বিজেপির আসন দখলের চেয়ে ভোটারের পরিমাণ বৃদ্ধি দলটির কাছে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কারণ, ২০১৬ সালে বিজেপি মাত্র ৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, যেখানে ২০১৯ সালে দলটি ৩৭.৫ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৬ সালের তুলনায় ২৮ শতাংশ ভোট বাড়ে বিজেপির।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই অঞ্চলের মধ্যে হাওড়া ও হুগলি জেলায় আরও ভালো ফল করেছে বিজেপি। কিন্তু, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও কলকাতায় তারা সেই অনুযায়ী প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
তবে বিজেপি এখানের ১৮টি লোকসভা আসন পেয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে ভোটের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পেরেছে। আবার এই বিধানসভা নির্বাচনে এসব অঞ্চলে ভালো প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। তারা কেবল জয় শ্রী রাম নয়, বাঙালি পরিচয়ের রাজনীতির সঙ্গেও পরিচিত হয়েছে।
অতএব, বিজেপি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সহ কয়েকজন বাঙালি আইকনকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে।
কিন্তু, তৃণমূল জেলাগুলোকে দারুণ ফল করেছিল। এ কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব আসন নিয়ে এবারও আশাবাদী। মমতা জানেন তিনি যদি এই আসনগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন। তাহলে তার পক্ষে সরকার গঠন করা অত্যন্ত কঠিন হবে। তাই তার জয় আজকের ভোটগ্রহণের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চাইলে বিজেপিকে এই অঞ্চল থেকে তৃণমূলকে অবশ্যই হারাতে হবে। একইসঙ্গে, ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তৃণমূলকেও এখানে আগের অবস্থান ধরে রাখতে হবে। অন্যথায়, এটি রাজ্যে ক্ষমতা হারাবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ