বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন স্থানে কিছু আবাসিক ও অনাবাসিক মাদ্রাসা এখনও খোলা রয়েছে। এ অবস্থায় এতিমখানা ছাড়া কওমি মাদ্রাসাসহ সারা দেশের সব ধরনের মাদ্রাসা (আবাসিক ও অনাবাসিক) পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ নির্দেশ পালনে কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না বলে নির্দেশে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তবে সরকারি এ নির্দেশনা মানছে না কওমী মাদ্রাসা। সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই পরীক্ষা আয়োজন করেছে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’। তবে শিক্ষা বোর্ডটির দাবি, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কওমি মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এরই মধ্যে পরীক্ষা নিচ্ছে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান) পরীক্ষা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কার্যকরী সদস্য মুফতি নুরুল আমিন।
আজ বুধবার (৭ এপ্রিল) তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ৩ তারিখ থেকে আমাদের এ পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আজ বুধবার দুই শিফটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ পরীক্ষা। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা আয়োজন করা হচ্ছে। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এ পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। আগামী রোববার পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ হবে।
লকডাউনের মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন সরকারি নির্দেশনা অমান্য হচ্ছে কি-না এমন বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি নুরুল আমিন বলেন, কওমি শিক্ষায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ থেকে যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সেটি আমাদের মুরুব্বিরা পর্যালোচনা করছেন। সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের পরীক্ষাগুলো সংকোচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
‘সরকার সব আবাসিক ও অনাবাসিক মাদ্রাসা বন্ধ রাখার বিষয়ে গতকাল পুনরায় নির্দেশনা দিয়েছে’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের ওই নির্দেশনা আমাদের কাছে আছে। সেখানে পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে কোনো কথা নেই। আমাদের আবাসিক-অনাবাসিক সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। পরীক্ষা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষেই নেয়া হচ্ছে।
সারাদেশের ২২২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা চলছে। সকাল ৯টা থেকে এবং বিকাল ৩টা থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
এর আগে করোনার দোহাই দিয়ে কওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধের পাঁয়তারা করা হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবীব।
তিনি বলেন, করোনার দোহাই দিয়ে মসজিদ বন্ধ করা যাবে না। করোনা আল্লাহ দিয়েছেন। করোনার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে মসজিদে বসেই তার কাছেই মুক্তি চাইবো। সরকারের প্রজ্ঞাপনে কওমি মাদ্রাসা বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে এই করোনার দোহাই দিয়ে কওমি মাদ্রাসা বন্ধ ও ইসলামী সভা-সমাবেশ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।
যদি এবার করোনার দোহাই দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ করা হয় তবে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া ও এবতেদায়ী মাদ্রাসায় তদারকির ঘাটতি আছে। আর কওমী মাদ্রাসা তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই। পরিচালনায় যারা থাকেন, বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসায় একক কর্তৃত্ব। মাদ্রাসাগুলোতে ঐ ধরণের কোনো নজরদারি না থাকাতে কেউ সেখানে দায়িত্ব নিয়ে দেখভাল করে না।
তারা বলেন, কওমী মাদ্রাসাগুলো কিন্তু সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্বেও কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে চায় নি। নিয়ন্ত্রণের কথা বলছি না। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বলছি, যার মাধ্যমে সরকারের এক ধরণের তদারকির দায়িত্বভার থাকবে।
তারা বলেন, কওমী মাদ্রাসা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা সরকারের সিলেবাসও অনুসরণ করে না। তারা সরকারের কাছে অর্থও নেয় না। তারা স্বাধীনভাবে চলে। তারা মনে করেন, কওমী মাদ্রাসার ক্ষেত্রে রাজনীতি এবং ভোটের রাজনীতি রয়েছে। সেজন্য কওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ