ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় লকডাউন তথা কঠোর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
তারা বলেন, যেখানে বেশিরভাগ যানবাহন চলছে, অফিস-কারখানা-বইমেলা খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান-মার্কেট খোলা রাখার সুযোগ দেওয়া হোক। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, গত বছরের লকডাউনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন মালামাল উঠিয়েছেন। লকডাউন থাকলে তাদের ব্যবসায় ধস নামবে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সবই চলছে। সবাই রাস্তায়। ঢিলেঢালা লকডাউন দিয়ে লাভটা কী? এ অবস্থায় আমাদের সুযোগ দেওয়া হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা হচ্ছে। কারও ঈদের অনেক আগে থেকে কাজ শুরু, কারও–বা ১০ দিন আগে থেকে। এখন পাইকারি ব্যবসার মুভমেন্ট থাকার কথা ছিল। সব কলাপ্স (ধস নেমেছে) করেছে।’
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউন দিলে শতভাগ কার্যকর হোক। এখন আমাদের ওপর শুধু নিষেধাজ্ঞা কেন? আমরা তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’ সকালে গাউছিয়া দোকান মালিক ও কর্মচারী সমিতির লোকেরাও ওই এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। তারা সেখানে স্লোগান দেন, ‘লকডাউন মানি না, মানব না’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব’।
ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা, গাউছিয়া, চাঁদনীচক, এলিফ্যান্ট রোডে বড় কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স দেশের সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদুল ফিতরকে উপলক্ষ করে মুখিয়ে থাকেন।
রোজার আগে মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে গতকাল রবিবার বসুন্ধরা ও নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ ছিল। এ জন্য আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটও হয়েছিল বেশ। এ সময় সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা গুলিস্তান থেকে ধামরাইগামী সাহদাত পরিবহনের একটি বাসসহ তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। একই দাবিতে গতকাল রাজধানীর মৌচাক মোড়ে বিভিন্ন মার্কেটের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এখানে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান রমনা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও দোকান মালিকরা জানান, নিউ মার্কেট এলাকার সড়কে দুপুরে ‘লকডাউন চাই না, দোকান খোলা রাখতে চাই’ লেখা একটি ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেন নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশন, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেটের আট শতাধিক দোকানের মালিক ও শ্রমিকরা। একপর্যায়ে তারা মিছিল করেন। নিউ মার্কেট থেকে মিছিলটি ঢাকা কলেজ ঘুরে আবার নিউ মার্কেটের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে বিক্ষুব্ধরা সড়কে বসে লকডাউনবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এতে দুই পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সড়ক থেকে সরে যেতে বললে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষুব্ধরা একটি বাসসহ তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের কারণে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ওই এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাজি ফ্যাশনসের মালিক মো. শামসুদ্দীন জানান, গতবারের লকডাউনে তারা ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করেছেন। আবারও সরকার লকডাউন দিয়েছে। তারা ব্যবসায়ীরা কোনো লকডাউন চান না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু রাখতে চান। সবুজ নামে এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সড়কে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উসকানিতে পুলিশ হামলা করেছে। লকডাউনে দিনে চার ঘণ্টা মার্কেট খোলা রাখতে চান। যুক্তি হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা চলার কথা বলেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ