দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুরুতে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও এখন অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। টিকাকেন্দ্রগুলোতে সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাসহ বয়স্ক মানুষের ভিড় বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বড় কোনো অঘটন বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারও কারও হয়েছে, যা স্বাভাবিক। এ জন্য কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতেও হয়নি।
আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় সংস্থা (সিডিসি) সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে টিকাকরণের পর কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে তা সবিস্তারে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই নিয়মগুলির অনেকটাই গুরুত্ব আছে।
প্রথমত মাস্ক পরার অভ্যাস ছাড়লে চলবে না। করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত মাস্ক পরার অভ্যাস তৈরি হয়েছে বিশ্বের। টিকা নেওয়ার পর সেই অভ্যাস ঝেড়ে ফেললে চলবে না। নিয়মিত মাস্ক পরতেই হবে। যতদিন না দেশের ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ না হয়, দেশের মানুষের ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জিত না হয়, তত দিন মাস্ক পরার মতো সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে।
মার্কিন গবেষকরা বলছেন, টিকাকরণের পরেও আপনার করোনা হতে পারে। সেই কারণেই মাস্ক নিয়মিত পরতে হবে। আমেরিকার চিকিৎসকরা বলছেন, টিকার কার্যকারিতা রোগের প্রাবল্য কমানো। যাতে আপনাকে হাসপাতালে যেতে না হয় বা আপনার মৃত্যু না হয়। কিন্তু টিকা নেওয়ার পরেও আপনার ঝুঁকি থাকবে।
গবেষকরা বলছেন, আপনি চাইলে আত্মীয়, বন্ধু, পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, তা-ও আপনার কাছ থেকে অন্য জনের শরীরে রোগ ছড়াতে পারে। তাই মাস্ক পরা-সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্তই জরুরি। অনেকেই জানতে চান, টিকা নেওয়ার পর যদি করোনা আক্রান্তের কাছাকাছি যদি আপনি আসেন, তা হলে কি নিভৃতবাসে থাকা জরুরি?
আমেরিকার চিকিৎসকরা বলছেন, না, সেটা জরুরি নয়। তবে যদি কোনও কারণে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, সিডিসি জানাচ্ছে, তাহলে একবার পরীক্ষা করে নেওয়াই উচিত। তবে টিকা নেওয়ার পরেও নিয়মিত গণপরিবহণে যাতায়াত করা ঠিক নয়। কারণ গণপরিবহনে নিয়মিত যাতায়াত করলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা বেড়ে যায়। তাই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
এতদিন ধরে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা, ডাক্তার দেখানো বন্ধ রেখেছিলেন। সেগুলি আবার শুরু করতে পারেন টিকা নেওয়ার পর। তবে আপনাদের মনে রাখতে হবে, একটা ‘বুস্টার ডোজ’ আপনার প্রয়োজন হতে পারে। যাই হোক, দেশের বেশির ভাগ মানুষের টিকাকরণ যতদিন না হচ্ছে, দেশের মানুষ ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন না করছেন, তত দিন স্বাভাবিক জীবনে ফেরা উচিত নয় বলেই মনে করছে সিডিসি। এই সময়ে তাই নিয়মিত যাতায়াত উচিত হবে না। টিকা নেওয়ার দিনক্ষণ লিখিত রাখুন, দরকারে সেটি পরবর্তীতে কাজে লাগতে পারে। যে নথি টিকাকরণের কেন্দ্র থেকে যে নথি দেওয়া হচ্ছে, সেটি যত্ন করে রাখুন।
এদিকে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন ৫,৬৮৩ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। এই নিয়ে বাংলাদেশে মোট কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে নয় হাজার ২১৩ জনের। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজারের বেশি করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৬,৪৬৯ জন। শুক্রবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৬,৮৩০ জন। যদিও অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কিছুটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪,৫৪৮ নমুনা পরীক্ষা করে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩.১৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ