বিশ্বে মহামারি করোনা কিছুটা দুর্বল হয়ে কমতির পথে পা বাড়ালেও ইউরোপের কিছু দেশে এখনো করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানিতেও করোনা তার বিষদাঁতে মরণ-কামড় দিয়ে রেখেছে। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হয়ে জার্মানি তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে পড়েছে৷ গত সপ্তাহে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল এক লাখ৷ আক্রান্তের এ সংখ্যা চলতি বছরের মধ্য জানুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷ জার্মানির কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে করোনা মহামারি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে মনে করেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ তাদের উপেক্ষা করে সরাসরি কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন তিনি৷
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার যে মাত্রায় বেড়ে চলেছে, ইস্টারের ছুটির পর তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ অথচ করোনা মহামারির ‘তৃতীয় ঢেউ’ সত্ত্বেও ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি কিছুতেই কড়া পদক্ষেপের প্রশ্নে ঐকমত্যে আসতে পারছে না৷ এমন প্রেক্ষাপটে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিশেষ আইনের আশ্রয় নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মতি ছাড়াই দেশজুড়ে ব্যাপক কড়াকড়ির প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন৷ রবিবার(২৮মাচ) রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন৷
এ পর্যন্ত ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনায় যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার কয়েকটি মোটেই কার্যকর করা হচ্ছে না৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাত দিনের গড় সংক্রমণের হার নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে কোনো অঞ্চলে যে সব কড়াকড়ি কার্যকর করার কথা, কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী নানা কারণ দেখিয়ে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন৷ রোববার সেই হার ছিল প্রায় ১২৫৷ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করার পথে এগোচ্ছেন কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী৷ এমন ‘এমারজেন্সি ব্রেক’ সক্রিয় না করার ফলে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ ম্যার্কেল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ কমানো, কারফিউ ও হোম অফিস বাধ্যতামূলক করার মতো নিয়ম কার্যকর না করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে৷ যে সব শ্রমিক বা কর্মীদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে, তাদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি আবেদনে কাজ না হলে ম্যার্কেল অন্য পথে যাবার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, দৈনিক সংক্রমণের হার এক লাখ ছোঁয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন না৷ প্রয়োজনে সংক্রমণ সুরক্ষা আইন কাজে লাগিয়ে ফেডারেল স্তরে একতরফা কড়া সিদ্ধান্ত প্রয়োগের পূর্বাভাষ দিয়েছেন ম্যার্কেল৷
এই মুহূর্তে কঠোর লকডাউন, টিকাপ্রদান এবং করোনা টেস্টসহ একটি সমন্বিত চেষ্টা প্রয়োজন৷ তা না হলে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটগুলো চাপ সামলাতে পারবে না বলে মনে করেন জার্মান ইন্টারডিসিপ্লিনারি এসোসিয়েশন ফর ইনটেনসিভ কেয়ার আ্যান্ড ইমার্জেন্সি মেডিসেনের প্রধান ক্রিশ্চিয়ান কারাইয়ানিভিস৷ ডাক্তারদের আশঙ্কা করোনার তৃতীয় ঢেউ আরো ভয়াবহ হতে পারে৷
রবার্ট কখ ইনস্টিউট এবং ফেডারেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও করোনা সংক্রমণের চলমান হার সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্র ইয়েন্স স্পান বলেন, দশ থেকে চোদ্দ দিনের ‘আসল শাটডাউন’-এর প্রয়োজন রয়েছে৷ এই সময়কালে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ভ্রমণ একেবারে কমিয়ে আনতে পারলে সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব হবে৷ চ্যান্সেলর দফতরের প্রধান হেলগে ব্রাউন বলেন, জার্মানি করোনা মহামারির সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে৷ তার মতে, ‘তৃতীয় ঢেউ’-এর সময়ে আরও বিপজ্জনক মিউটেশন সৃষ্টি হতে পারে৷ সেগুলি মোকাবিলায় এমনকি টিকাও কার্যকর না হতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷
এদিকে করোনা নিয়ে ফ্রান্সের পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। সাবধানবানী চিকিৎসকদের। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে এরপর ডাক্তারদের ভাবতে বাধ্য হবেন, তাদের হাতে যে পরিকাঠামো আছে, তা দিয়ে কোন রোগীার চিকিৎসা তারা করতে পারবেন, কার করতে পারবেন না। চিকিৎসকদের এই হুঁশিয়ারি প্রকাশিত হয়েছে ফ্রান্সের একটি সংবাদপত্রে, যেখানে বহু চিকিৎসক সই করেছেন।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এখন সেখানে চার হাজার ৮০০ মানুষ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে(আইসিইউ) ভর্তি হয়ে আছেন। এই বছরে এত মানুষ এর আগে কখনো আইসিইউ-তে থাকেননি। চিকিৎসকরা বলছেন, পরিস্থিতি এর থেকেও অনেক খারাপ হবে। প্যারিসের ৪১টি এলাকার চিকিৎসকরা বলেছেন, ”আমরা এমন পরিস্থিতির কথা আগে কখনো ভাবতে পারিনি। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার থেকেও এই পরিস্থিতি খারাপ।”
চিকিৎসকদের মতে, প্যারিস ও অন্য কিছু জায়গায় সামান্য কড়াকড়ি করা হয়েছে। তার জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। যদি এখনই কোনো কড়া সিদ্ধান্ত না হয়., তা হলে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯২২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ