মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছেই। বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী দেশের পুরো ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ৩২০ জন। গত বৃহস্পতিবারই এ তালিকায় যোগ হয়েছেন অন্তত নয়জন। এসবের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যৌথভাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত দুটি শিল্প গোষ্ঠীকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ওয়াশিংটন এটিকে মিয়ানমার জান্তার বিক্ষোভকারীদের প্রতি ঘৃণ্য সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুন, মধ্যাঞ্চলীয় মনোয়াসহ আরও কয়েকটি শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় তাউঙ্গি শহরেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অন্তত চার বিক্ষোভকারীকে।
মোনইয়া শহরে ‘আমরা কী ঐক্যবদ্ধ?’ ‘হ্যাঁ, আমরা ঐক্যবদ্ধ’; ‘বিপ্লব অবশ্যই জয়ী হবে’ বলে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
নান্ত খি ফিউ আই নামের একজন বলেন, অনেক তরুণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তারা প্রতিদিন বিক্ষোভ করতে চাচ্ছেন। একদিনও বাদ দিতে চাচ্ছেন না।
হিনথার মিডিয়া করপোরেশন জানিয়েছে, মওলামিয়ান শহরের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে আটক হয়েছেন ২০ জন। এ ছাড়া দুজন আহত হয়েছেন।
অন্য গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুসারে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুঁড়লে অন্তত পাঁচজন জখম হয়েছেন।
অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের তথ্যমতে, মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অন্তত ৩২০ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড এবং মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন লিমিটেডের ওপর ব্যবসায়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ।
ব্রিটেনও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে।
এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের কোনও মন্তব্য পায়নি রয়টার্স। এর আগে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
মার্কিন এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই দুটি কোম্পানির যে কোনও সম্পদ জব্দ করতে পারবে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এটি সেগুলোর সর্বশেষ।
এই তালিকায় থাকার ফলে মার্কিন কোম্পানি বা নাগরিকরা দুটি কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য বা আর্থিক করতে পারবে না। এছাড়া যেহেতু ডলারে যে কোনও লেনদেন মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়, তাই তালিকায় থাকা কোম্পানি আমেরিকার ব্যাংক ব্যবস্থায় নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হয়।
বৃহস্পতিবারের এই পদক্ষেপটি মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ। এই দুটি কোম্পানি দেশটির অর্থনীতির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ব্যবসা সিগারেট থেকে টেলিযোগাযোগ, টায়ার, খনি ও আবাসনে বিস্তৃত।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধারাবাহিকভাবে নিজেদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারপর থেকেই দেশটিতে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশও গুলি ছুঁড়ছে। প্রতিদিনই পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের প্রাণ যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে জান্তাবাহিনী দেশজুড়ে চলমান বিশৃঙ্খলার জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়ী করছে। বলছে, অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীরাই দেশজুড়ে বিশৃঙ্খখার সৃষ্টি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১১২০
আপনার মতামত জানানঃ