সম্প্রতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নেভাল বিচ এলাকায় এক তরুণীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পতেঙ্গা নেভাল বিচ এলাকায় সিমি তার এক ছেলে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এক কিশোরীকে মারধর করে এবং তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এর পরই তিনি সমালোচনায় চলে আসেন। এই ভিডিও নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর পুলিশ গত শনিবার তাহমিনা সিমিকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন ওয়াসিফা চৌধুরী অর্না নামের এক তরুণী।
কথায় কথায় তরুণ ও তরুণীদের পেটানো যেন নেশায় পরিণত হয়ে গেছে তাহমিনা সিমরান সিমির। লেডি গ্যাং লিডার কুখ্যাতি পাওয়া ১৯ বছরের সিমির দলে আছে আরও সাত তরুণ-তরুণী। কখনও মানুষের বাসায় ঢুকে, কখনও বিনোদন কেন্দ্র নেভাল একাডেমি আবার সিআরবি শিরীষতলায় প্রকাশ্যে মানুষ পিটিয়ে উঠে আসছেন শিরোনামে। জনবহুল এলাকায় মানুষ পেটানোর দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুক ও ইউটিউবে নিজেই ছড়িয়ে দেন তিনি। ছয় মাসের ব্যবধানে দুই মামলার আসামি হয়ে ফের কারাগারে গেছেন তিনি। মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানুষ পেটানোর বহু অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়।
জানা যায়, সিমি নগরের ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং বড়বাড়ি এলাকার কামাল হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে পালক বাবার কাছে বড় হচ্ছেন তিনি। নগরীর একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। সিমির গ্যাংয়ের সাত সদস্য হলো- শাকিল, মাহি, আরবিন, ওয়াহিদ, রাইসা, রায়হান ও রুবেল। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তারা কলেজ পড়ূয়া শিক্ষার্থী। এর মধ্যে শাকিল নগরীর পতেঙ্গার মাদ্রাসা গেট এলাকার বাসিন্দা, মাহি সল্টগোলা ক্রসিং, আরবিন ১৪ নম্বর লালদিয়ারচর, রাইসা নাসিরাবাদ, রায়হান জিইসি মোড় ও রুবেল ১৪ নম্বর লালদিয়ারচর এলাকার বাসিন্দা।
পান থেকে চুন খসলেই পরিচিত বন্ধু ও টার্গেটকে পেটাতে সিমির গ্যাং তিনটি এলাকাকে বেছে নেয়। এগুলো হলো- পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও জনবহুল সিআরবি মাঠ। সিমির দলে থাকা সদস্যের কেউ পেটানোর দৃশ্য ধারণ করেন, সিমিসহ তিনজন সরাসরি মারধরে অংশ নেন। পেটানোর দৃশ্য কয়েকটি অংশে ভাগ করে তা টিকটক ভিডিওর মতো তৈরি করে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেন।
জানা যায়, পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার সিমি ছোটকাল থেকেই ডানপিটে ছিলো। তবে ছয় বছর আগে বাবা কামাল হোসেনের মৃত্যুর পর স্থানীয় একটি কলেজের এই শিক্ষার্থী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরমধ্যে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাসায় ঢুকে এক তরুণীকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনায় আসেন এই তরুণী। ওই ঘটনার দায়ের করা মামলার জেরে সেসময় আটক হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন এই লেডি কিশোর গ্যাং নেত্রী। সেই মামলায় বেশ কয়েকদিন কারাগারে থেকে জামিন পায় সে।
সর্বশেষ গত শনিবার সিমি ও তার গ্রুপের আরও একটি অপকর্মের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পতেঙ্গা নেভাল বিচ এলাকায় সিমি তার এক ছেলে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এক কিশোরীকে মারধর করে এবং তাকে হত্যার হুমকি দেয়। সেই সাথে উক্ত কিশোরীকে অনেক আকুতি মিনতি করতে দেখা যায় ভাইরাল ভিডিওটিতে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পতেঙ্গা থানার নেভাল এলাকায় এক তরুণীকে শাসাচ্ছেন সিমি। ওই তরুণী মাফ চাইলেও বেশ উত্তেজিত দেখা গেছে এই লেডি গ্যাং লিডারকে। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত থাকা এক তরুণও সিমিকে সঙ্গ দিয়ে ওই তরুণীকে কয়েক দফা চড়-থাপ্পড় দেন। কিন্তু তখনো ক্ষান্ত হননি সিমি।
ওই তরুণীকে উদ্দেশ্য করে সিমি বলতে থাকেন- ‘আমি চাইলে তুমি এখান থেকে জিন্দা যাইতে পারবা না’।
এদিকে কিশোরীকে মারধরের মামলায় লেডি গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত তাহমিনাকে তিন দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। গতকাল বুধবার (১৭ মার্চ) তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলায় বলা হয়, গত ৪ মার্চ পতেঙ্গা নেভাল এলাকায় সিমি ও তার বন্ধু মেহেরুল হাসান মারধর করেন অর্নাকে। পরে মারধরের ভিডিও ১২ মার্চ সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর পতেঙ্গা থানার এসআই মহিউদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, টিকটক তারকা হিসেবে দ্রুত ফেমাস হতেই মানুষ পেটানো নেশায় পরিণত হয়েছে সিমির। শুধু তিনি একা নন, ছয়-সাতজনের একটি গ্যাংও তৈরি করেছেন। টার্গেট করেই মানুষকে পেটানো ভিডিও ধারণ করে সিমি নিজেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। গতকাল বুধবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১২০
আপনার মতামত জানানঃ