প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে। চাকরিপ্রার্থীরা ওই সব নীতিমালার বাইরে থাকলে চাকরিতে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হোন। তেমনি নীতিমালা মেনে আড়ং এক যুবককে দাঁড়ি থাকায় চাকরিতে অনুমতি দেয়নি। আর এ অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন আলেম সমাজ। দাঁড়িওয়ালা যুবককে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগে সিলেটে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ সোমবার (১৫ মার্চ) বেলা ১১টায় নগরীর জেল রোডস্থ আড়ং শো-রুমের সামনে ‘সিলেটের সচেতন আলেম সমাজ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় আলেম ও ধর্মপ্রাণ জনতা।
দাঁড়ি থাকায় ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় আড়ংয়ের একটি শো-রুমে চাকরি দেওয়া হয়নি- এমন অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার একটি ভিডিও আপলোড করেন ইমরান হোসাইন লিমন নামের এক যুবক। ৮ মিনিটের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরবর্তীতে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ভিডিওতে লিমন বলেন- তেজগাঁওস্থ আড়ংয়ের শো-রুমে তিনি সপ্তাহখানেক আগে সিভি জমা দেন। শুক্রবার তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পেয়ে খুশি হন। কিন্তু হঠাৎ করে লিমনকে মাস্ক খুলতে বলেন এবং মাস্ক খোলার পর তার মুখভর্তি দাঁড়ি প্রকাশিত হয়ে পড়লে সাক্ষাৎকারগ্রহীতারা তাকে বলেন, তাদের নীতিমালা অনুযায়ী তারা দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তিদের বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন না।
এদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হবার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট নগরীর জেল রোডস্থ আড়ং শো-রুমের সামনে আজ সকাল ১১টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দেয় ‘সিলেটের সচেতন আলেম সমাজ’। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল ১১টায় জেল রোডস্থ আড়ং শো-রুমের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ঢাকার ঘটনার প্রতিবাদ জানান সিলেটের কয়েক শ আলেম, শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ইসলামকে অবমাননা করে পৃথিবীতে আবু জাহেল, নমরুদ, ফিরাউন ওরা কেউ টিকতে পারেনি। সময়ের পালাবদলে তাদেরকে ধ্বংস হতে হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী (স.) এর সুন্নাত দাঁড়ি নিয়ে তামাশা করায় আড়ংও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই অবিলম্বে আড়ং কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এমন অবস্থান এবং মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে। নতুবা দেশবাসীকে নিয়ে আড়ংয়ের সকল পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হবে।
এদিকে আড়ংয়ের পক্ষ থেকে যুবকের সাথে ঘটে যাওয়া ওই অভিজ্ঞতাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে লেখা হয়, “এটি নিঃসন্দেহে আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী”।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আড়ং বয়স, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, অক্ষমতা বা জাতিগত উৎস নির্বিশেষে সকলের জন্য মানবিক মর্যাদা এবং অন্তর্ভুক্তির অধিকারগুলো সমুন্নত রাখে। আমাদের নিয়োগের সিদ্ধান্তে ধর্মীয় বিশ্বাস ও পালনকে কখনই বিবেচনা করা হয় না”।
বিবৃতিটি আরো বলছে, “আমাদের ভবিষ্যতের ইন্টারভিউ বোর্ডগুলোর পরিচালনায় আমাদের মূল মূল্যবোধগুলোর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করবো”।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন বিক্রয়কর্মী হিসাবে তার কিছু সাধারণ ক্রাইটেরিয়া থাকে। মূলত দেখতে সুদর্শন, কথা বলায় স্মার্টসহ আরও কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকে যা ক্রেতাদের আকর্ষণ করা ও সেবা করার সুবিধার জন্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে। তবে বিক্রয়কর্মী হিসাবে নারীদের অগ্রাধিকার বেশি থাকে বিভিন্ন চাকরি সংস্থসাগুলোর। কারণ হিসাবে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার সাথে খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করার বিষয়টি থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তার নীতিমালার বাইরে কাউকে নিয়োগ না দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। এক্ষেত্রে আড়ংকে আগে থেকেই তাদের নীতিমালা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল। এতে নীতিমালার বাইরে পড়ে এমন কারো প্রার্থী হবার সুযোগ থাকে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৭
আপনার মতামত জানানঃ