অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। এরইমধ্যে অন্তত অর্ধ ডজন ইউরোপীয় দেশ থেকে ভ্যাকসিনটি বর্জনের ঘোষণা এসেছে।
গত কয়েক দিনে এই টিকার প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ডেনমার্ক, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও থাইল্যান্ড। সর্বশেষ রবিবার (১৪মার্চ) এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে নেদারল্যান্ডস। ডাচ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ স্থগিত রাখবে আমস্টারডাম।
এক বিবৃতিতে ডাচ সরকার জানিয়েছে, ডেনমার্ক ও নরওয়ে থেকে সম্ভাব্য গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর প্রকাশের পর তারা সাবধানতা অবলম্বন করছে। ডাচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো ডি জনগি বলেছেন, তার দেশ এই ভ্যাকসিন নিয়ে কোনও সন্দেহ তৈরির সুযোগ দিতে পারে না। তার ভাষায়, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, সবকিছু ঠিক আছে। তাই আপাতত বিরতি দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।’
বিবিসি জানিয়েছে, রবিবারের এই সিদ্ধান্তের ফলে নেদারল্যান্ডসের টিকাদান কর্মসূচিও পিছিয়ে পড়বে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই কোটি ২০ লাখ ডোজ টিকা প্রি-অর্ডার করেছিল দেশটি। এরমধ্যে আগামী দুই সপ্তাহে প্রায় তিন লাখ ডোজ ভ্যাকসিন নেদারল্যান্ডসে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে শুক্রবার (১২ মার্চ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে অক্সফোর্ডের টিকা গ্রহণ করার পর কারো কারো শরীরে রক্ত জমা বাঁধছে। কিন্তু অক্সফোর্ডের টিকা নিলে মানুষের শরীরের রক্ত জমা বাঁধবে, এমন কোনো আভাস মেলেনি।
কী বলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা?
অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের ভ্যাকসিনের কারণে লোকজনের রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার চিফ মেডিকেল অফিসার আন টেলর বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ আমাদের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা কয়েকশ-এরও কম।
কোম্পানিটি বলছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটির সুরক্ষার বিষয়টি গভীরভাবে গবেষণা করা হয়েছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেন, রোগীর সুরক্ষাকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেয়। ওষুধ নিয়ন্ত্রকরা ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা মান মেনেই ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পিয়ার রিভিউ করা তথ্যেও দেখা গেছে সাধারণভাবে শরীরের জন্য ভালো সহিষ্ণু।
যুক্তরাজ্যের মেডিসিন্স অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি বলছে, ভ্যাকসিন সমস্যা তৈরি করছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। মানুষের উচিত ভ্যাকসিন নেওয়া। সংস্থাটির ফিল ব্রায়ান বলেন, রক্তে জমাট বাঁধা স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে এবং এটি অস্বাভাবিক না। যুক্তরাজ্যজুড়ে এক কোটির বেশি মানুষ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করছে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ)। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, ভ্যাকসিনটির কিছু ঝুঁকি থাকলেও এর সুবিধা তার চেয়েও বেশি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ফাউন্ডেশনে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১৪
আপনার মতামত জানানঃ