নারীরা এখন আর পুরুষের সফলতার পেছনে থেকেই ভূমিকা রাখছে না, তারাও এখন উপসংহারে পৌঁছাচ্ছে, নিজের সফলতার খাতা খুলতে শিখেছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে তারাও পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলছে। আর তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে বিশ্ব পার্লামেন্টে। বিশ্ব পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা ইতিমধ্যে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, বর্তমানে বিশ্বের প্রতি চারজন পার্লামেন্ট সদস্যের একজন নারী। যদিও পার্লামেন্টে নারীর উপস্থিতি বেড়েছে তবুও এখনও নারী-পুরুষের ব্যবধান অনেক বেশি। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতায় পৌঁছাতে আরও ৫০ বছর লাগতে পারে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, আগের বছরের তুলনায় বিশ্বে ২০২০ সালে পার্লামেন্টে নারী সদস্যের সংখ্যা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা ২৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ওই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আইপিইউর মহাসচিব মার্টিন চুনগং বলেন, ‘আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে প্রথমবারের মতো বিশ্বে পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ ছাড়াল।’ এ সময় তিনি পার্লামেন্টে নারী সদস্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় রুয়ান্ডা, কিউবা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ধন্যবাদ জানান। বর্তমানে এ তিনটি দেশের পার্লামেন্টে অর্ধেক কিংবা এর বেশি নারী সদস্য রয়েছেন। রুয়ান্ডায় দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নিম্নকক্ষে নারী সদস্যের হার ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ।উচ্চকক্ষে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ। কিউবা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ।
তবে পার্লামেন্টে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্টিন চুনগং বলেন, পার্লামেন্টে নারীর উপস্থিতি বর্তমানে যে হারে বাড়ছে, তাতে নারী-পুরুষের সমতায় পৌঁছাতে লাগবে আরও ৫০ বছর। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আইপিইউর প্রতিবেদনের তথ্যমতে, নিউজিল্যান্ডে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত নতুন পার্লামেন্টে নারী সদস্যের হার দাঁড়িয়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি।
অস্ট্রেলিয়ায় এ হার ৩১ শতাংশ। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে নারী সদস্যের হার ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ, উচ্চকক্ষে প্রায় ২৮ শতাংশ। জার্মানির নিম্নকক্ষে এ হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, উচ্চকক্ষে ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি।
অন্যদিকে কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে নারী সদস্যের হার ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে উচ্চকক্ষে তা ৪৯ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে নারী সদস্যের হার ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ, উচ্চকক্ষ সিনেটে ২৫ শতাংশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন একজন নারী। আর চীন ও সৌদি আরবের পার্লামেন্টে নারী সদস্যের হার যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
তবে এক্ষেত্রে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আইপিইউর প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান সংসদে ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে ৭৩ জন নারী, যা প্রায় ২০ দশমিক ৯ শতাংশ। এই হিসাবে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্ন ও উচ্চকক্ষে নারী সদস্যের হার যথাক্রমে ২০ দশমিক ২ শতাংশ ও ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। ভারতে এ হার আরও কম। নিম্নকক্ষে নারী সদস্যের হার ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, উচ্চকক্ষে ১১ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের প্রতি মনোভাব বেশ পরিবর্তন হয়েছে। কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায় নারীর মর্যাদা ও অবদানের স্বীকৃতি বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতিতেও বেড়েছে নারীর আগ্রহ ও অংশগ্রহণ। তবে নারীর ক্ষমতায়ন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যায়নি। রয়ে গেছে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা। যে কারণে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আশানুরূপ ও ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
তারা বলছেন, নারী-পুরুষের সমতা অনুধাবনের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতায় নারী-পুরুষের আনুপাতিক অবস্থান। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের বিষয় বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। নারীরা তাদের মেধা, শ্রম, সাহসিকতা, শিক্ষা ও নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন এবং একই সঙ্গে ভূমিকা রাখছেন একটি স্বাবলম্বী শিক্ষিত প্রজন্ম গঠনে। নানা অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে যে অভাবনীয় আর্থিক সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও প্রবৃব্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে, তা মূলত নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতির জন্যই।
তারা বলছেন, নারী ও পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে থাকতে হবে। সে জন্য রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৯
আপনার মতামত জানানঃ