দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত-চীন দ্বৈরথের এক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেই রাজনীতি প্রভাব ফেলেছে ভ্যাকসিন রাজনীতিতেও। গত ২০ জানুয়ারি ভারত বাংলাদেশকে ২০ লাখ টিকা উপহার দিলে এবার চীনের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশকে টিকা অপহার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চীনের এই লিখিত প্রস্তাব এসে পৌঁছেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, চীন আমাদেরকে উপহার হিসেবে ভ্যাকসিন পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সংখ্যাটা ২ লাখেরও বেশি। এ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে আমরা প্রস্তাবটিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। দেখি তারা কী জানায়।
এ কে আবদুল মোমেন জানান, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য আমরা চতুর্মুখী চেষ্টা চালাচ্ছি। ভারত থেকে আরো ভ্যাকসিন আনার জন্য একটা নতুন চুক্তি করার কথা ভাবা হচ্ছে। এদিকে চীনের উপহার পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রাশিয়ার উদ্ভাবিত টিকা আমদানি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দেশে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৯০ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। গত ২০ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো টিকা এসে পৌঁছায়। সেটা ছিল ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া ২০ লাখ ডোজ। পরবর্তীতে ২৫ জানুয়ারি আসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা, যা ছিল সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির আওতায় প্রথম চালান। তারপর দ্বিতীয় চালান হিসেবে এসেছে আরও ২০ লাখ ডোজ।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। সেরামের কাছ থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। ওই দিন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে চীনা প্রতিষ্ঠান আনুই জিফেই নিজেদের টাকায় বিএসএমএমইউর সঙ্গে করোনার টিকা পরীক্ষার প্রস্তাব দেয়। পরীক্ষা সফল হলে তারা বাংলাদেশে টিকার গবেষণার পাশাপাশি টিকা উৎপাদনের কারখানা স্থাপনেরও কথা বলে ওই প্রস্তাবে। এর আগে চীনের টিকা উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক তাদের টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে খরচ ভাগ করে নিতে বলেছিল চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক। তবে সরকার সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেই কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়।
পরে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর চলতি বছরের শুরুতে বিএসএমএমইউ টিকা পরীক্ষার প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে আনুই জিফেইকে চিঠি দেয়। তখন আনুই জিফেই বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন ও পরীক্ষার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দিলে তারা এখানে টিকা উৎপাদন করবে। একইসঙ্গে টিকার ট্রায়াল দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। টিকা পরীক্ষা সফলভাবে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে যে টিকা উৎপাদিত হবে, তার একাংশ মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের দেওয়ার কথা বলেছিল।
এসডব্লিউ/বিটি/কেএইচ/১৮১৭
আপনার মতামত জানানঃ