ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা কারণে আলোচিত ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। এবার তার লক্ষ্য কমিউনিস্টদের উৎখাত করা। সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের ‘হত্যার’ মাধ্যমে ‘শেষ করে ফেলার’ নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত এক সরকারি সভায় গতকাল শুক্রবার (০৫ মার্চ) এ নির্দেশ দেন দুতার্তে। খবর আল জাজিরা
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে বলেছি, যদি কখনো কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয় তবে তাদের হত্যা করো। এরপর নিশ্চিত হও যাকে গুলি করা হয়েছে তার মৃত্যু হয়েছে কি-না। যদি মৃত্যু না হয়ে থাকে তবে সেখানেই তাকে হত্যা করো।
তবে মরদেহগুলো যেন পরিবারে কাছে পৌঁছানো হয় সেটা নিশ্চিত করতে বলেছেন দুতার্তে। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর পর মরদেহগুলো যেন তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছানো হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ’
মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি বলেন, মানবাধিকারের তোয়াক্কা করতে হবে না। এটা আমার নির্দেশ। আমি জেলে যেতেও রাজি আছি। এটা কোনো সমস্যা নয়।
কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে দুতার্তে বলেন, তোমরা সবাই দস্যু। তোমাদের কোনো আদর্শ নেই। এমনকি চীন এবং রাশিয়া, তারাও এখন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র।
কমিউনিস্টদের হত্যার নির্দেশ দিলেও তাদের জন্য একটি সুযোগ রেখেছেন দুতার্তে। তিনি বলেন, যদি কমিউনিস্টরা বিরোধিতা বাদ দিয়ে অস্ত্র জাম দেয় তবে তাদের জন্য চাকরি, বাসস্থান এবং জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।
৫০ বছর ধরে কমিউনিস্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ফিলিপাইন। পূর্ববর্তী সরকারের মতো দুতার্তেও প্রথমে কমিউনিস্টদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর সে আলোচনা বাতিল হয়ে যায়। কমিউনিস্টদের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর দুতার্তে কমিউনিস্ট পার্টি অব দ্য ফিলিপাইনস এবং ৩৮০ সদস্যের সশস্ত্র শাখা নিউ পিপলস আর্মিকে (এনপিএ) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে যে দুর্বল ঐকমত্য ছিল, সেখান থেকে উভয়েই সরে এসেছে। ফলে ফিলিপাইনের প্রান্তিক অঞ্চলে নতুন করে সশস্ত্র বিবাদ শুরু হতে পারে। এসব অঞ্চলে কমিউনিস্ট আন্দোলন এখনো টিকে আছে। আবার অনেক জায়গায় তা শুরুও হচ্ছে।
কমিউনিস্টদের এমনিতেই তেমন একটা পছন্দ করেন না দুতার্তে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই কমিউনিস্টদের পছন্দ করি না, এরা সব বখে যাওয়া ছোকরা। এরা যেভাবে দাবি করে, তাতে আপনার মনে পড়ে, এরা সরকারে আছে।’
অন্যদিকে ফিলিপাইন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অসমতা ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ, সেখানে ভাগ চাষও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি, যার জন্য দেশটি কুখ্যাত। সেখানে ব্যাপারটা এমন যে, নিপীড়ক ভূস্বামী, লোভী মধ্যস্বত্বভোগী ও সুবিধাবাদী রাজনীতিকেরা নিয়মিতভাবে লাখ লাখ সাধারণ কৃষককে নির্যাতন করেন। এই কৃষকেরা এখনো প্রকৃত অর্থে ভূমি সংস্কার কর্মসূচি থেকে লাভবান হননি।
এই নিপীড়নের ফলে দেখা গেল, ফিলিপাইনের গ্রামীণ অঞ্চলে মানুষের মধ্যে প্রভূত ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মধ্যে সামগ্রিকভাবে এই ক্ষোভ আছে বলে মানুষ বিদ্রোহ করছে, যাদের বেশির ভাগই কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে উজ্জীবিত। কমিউনিস্ট আন্দোলন ১৯৮০-এর দশকের ফিলিপাইনে একনায়ক মার্কোসের আমলে চরমে পৌঁছেছিল। কিন্তু এই আন্দোলন সম্প্রতি আদর্শিক গতি, সমর্থক-ভিত্তি ও সামরিক শক্তি হারিয়েছে।
সম্ভবত, দুতার্তে কমিউনিস্টদের সতর্ক করে স্বল্প মেয়াদে কৌশলগতভাবে জয়লাভ করতে চাচ্ছেন, যিনি এর বাইরে যাবেন না। অনেকেই এখনো আবেগ নিয়ে আশা করছেন, শিগগিরই শান্তি আলোচনা শুরু হবে। সর্বোপরি, শান্তির বিকল্প নেই! কয়েক দশকের রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পর শান্তি আরও দামি ব্যাপার হয়ে গেছে, যদিও মনে হচ্ছে, তা এখনো গোলকধাঁধার মধ্যে আছে।
কমিউনিস্টরা ১৯৬৮ সাল থেকে ফিলিপিন্সে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। দেশটির সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, এই বিদ্রোহকে কেন্দ্র ৫৩ বছরে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/ ১৪২১
আপনার মতামত জানানঃ