বরগুনার বামনায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মা ও মেয়েকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে রামনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম জমাদ্দারের বিরুদ্ধে।
গুরুতর আহত ওই নারী ও তার মেয়েকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতেও বাধা দিয়েছেন অভিযুক্তরা। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে হামলার ৬ ঘণ্টা পর বামনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের কবল থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। মারধরের শিকার ওই নারীরা হলেন- রামনা ইউনিয়নের উত্তর রামনা গ্রামের মৃত ইউসুফ খানের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫৮) ও তার মেয়ে পারুল বেগম (৩৫)।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে গোয়ালঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম জমাদ্দার ও তার গাড়িচালক রাজু তাদের ওপর এ হামলা চালান। আহতরা বর্তমানে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
গুরুতর আহত পারুল বেগম বলেন, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে একটি গোয়ালঘর নির্মাণের সময় সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ও তার সহযোগী রাজু এসে বাধা দেন। তাদের দাবি ওই সম্পত্তি তাদের। অথচ আমরা ৫০ বছর ধরে ওই সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছি। রবিবার দুপুরে সাবেক চেয়ারম্যান ও তার গাড়িচালক এসে এলোপাতাড়ি আমাদের পেটাতে থাকে। তাদের হামলায় আমি ও মা মুখমণ্ডল ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পাই। আমরা হাসপাতালে আসতে চাইলেও দু-দুবার তারা আমাদের গাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে দেয়। পরে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাই। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করায়। এ সময় হাসপাতালে এসেও সাবেক ওই চেয়ারম্যান আমাদের হুমকি-ধামকি দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম জমাদ্দার ও তার সহযোগী রাজু জমাদ্দার এর আগে একাধিক হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে জোর লবিং চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ‘আমার সম্পত্তি দখল করে ওই নারীরা গোয়ালঘর তুলছে। আমি অনেকবার নিষেধ করলেও তারা তা ভ্রুক্ষেপ করেননি। তবে আমি তাদের ওপর কোনো ধরনের হামলা করিনি। হয়তো দু-একটি ধাক্কা দিয়েছি।’
বামনা থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ৯৯৯-এ কল পাওয়ার পরে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তারা বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত আহতদের পক্ষে কেউ থানায় এসে কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। মা ও মেয়েকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম জমাদ্দারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৪৯
আপনার মতামত জানানঃ