ময়মনসিংহের গৌরীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফকে অফিসে গিয়ে গালাগালসহ দেখে নেওয়া ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন সোহেল রানা নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। সোহেল রানা গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বলে জানা গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনাসভার ব্যানারে নাম না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে দলবল নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার(২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ছয়জনকে নামে ও অজ্ঞাত আরো ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ইউএনও দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২১ ফেব্রুযারি আলোচনা সভার ব্যানারে অনেকের নাম থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানার নাম ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে সোহেল রানা তার দলবল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। তখন কার্যালয়ে প্রশাসনের সব দফতরের কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ভাইস-চেয়ারম্যান সোহেল রানা কোনো ধরনের সালাম বিনিময় ছাড়াই হঠাৎ ভেতরে প্রবেশ করেন এবং উত্তেজিত হয়ে জানতে চান কেন তার নাম ব্যানারে নেই। এত বড় সাহস হলো কিভাবে? একপর্যায়ে ইউএনওকে কিছু বলতে না দিয়েই অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে দ্রুত চলে যান। পরে জেলা প্রশাসককে জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি রেকর্ডভুক্ত হয়।
ইউএনও হাসান মারুফ জানান, ভাইস-চেয়ারম্যান সোহেল রানা হঠাৎ ভেতরে প্রবেশ করে উত্তেজিত হয়ে জানতে চান কেন তাঁর নাম ব্যানারে নেই। আমার এত বড় সাহস হলো কিভাবে। একপর্যায়ে কিছু বলতে না দিয়েই অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে দ্রুত চলে যায়। এ ঘটনায় উপস্থিত সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পরে আলোচনা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি রেকর্ডভুক্ত হয়।
অভিযুক্ত ভাইস-চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, একটি জাতীয় অনুষ্ঠানের সভায় আমার নাম ব্যানারে না থাকার বিষয়ে নিজেকে অপমানিত বোধ করছিলাম। পরে নেতাকর্মীদের কথায় ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাওয়ার আগেই তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার সাথে যাওয়া নেতাকর্মীদের তাঁর কার্যালয়ে থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় আমিও কিছুটা উত্তেজিত হয়ে তাঁর সঙ্গে তর্ক করেছিলাম। প্রাণনাশের বা দেখে নেওয়ার কোনো হুমকি দেওয়ার কথা বলিনি। ঘটনাটি নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করব।
গৌরীপুর থানার ওসি খাঁন আব্দুল হালিম সিদ্দিকী মামলা হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুণ্ডামির এই চিত্র দেশে খুব প্রচলিত। তারা মনে করেন স্থানীয়ভাবে এতো প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী হয়েও তাদের গ্রাহ্য না করা অন্যায়ের শামিল। নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্যই ইউএনওর অফিসে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এমন গুণ্ডামি করেছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৭
আপনার মতামত জানানঃ