কাজী ফয়সাল : বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত নগর হওয়া সত্ত্বেও কয়েক যুগ ধরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত কৌশল এবং নীতির অভাবে ঢাকা শহরের প্রান এবং পরিবেশ উভয়ই ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা ব্যস্ততম এই শহরে পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং বর্জ্য পুড়ানোর ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিনদিন বেড়ে চলছে। ফলে ঢাকার বায়ু প্রায়ই ছাড়াচ্ছে ২০০ একিউআই যা স্বাস্থ্যকর মাত্রা থেকে অনেক বেশি। ড্রেন এবং ডোবা গুলো বন্ধ হয়ে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, দুষিত হচ্ছে পানি। তবে পরিবেশ সংরক্ষন এবং বর্জ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা “গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইনসিনারেটর এল্টারনেটিভস”(GAIA) ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আনার মাধ্যমে শুধু বর্জ্য নিষ্কাশন নয়, বরং অনেক কর্মক্ষেত্র তৈরি হতে পারে বলে তাদের গবেষণায় প্রকাশ করেছে।
“গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইনসিনারেটর এল্টারনেটিভস” সংস্থার মতে ঢাকার ৮০ শতাংশ পুনঃব্যবহারযোগ্য এবং জৈব বর্জ্য রূপান্তরের মাধ্যমে শুধু ঢাকাতেই নতুন ৬ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে। এই গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, বর্জ্যশূন্য কর্মসূচীর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের মাত্রা হ্রাস, নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমান পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। মেরামত, পুনঃব্যবহার, রিসাইক্লিং, জৈব উৎপাদন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ভস্মীকরণ এবং ভাগাড়গুলোতে অনেক কর্মসংস্থান হতে পারে বলেও সংস্থাটির গবেষণায় দেখানো হয়েছে। ময়লার ভাগাড় এবং পোড়ানর স্থানগুলোতে বিদ্যমান চাকূরির তুলনায় পুনঃব্যবহার পদ্ধতি ২০০ গুন, রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে ৭০ গুন এবং পুনঃউৎপাদনের মাধ্যমে ৩০ গুন বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
দীর্ঘ সময় যাবত বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা ঢাকার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষ বহুবছরেও একটি পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুটো সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ঢাকায় রয়েছে দুটো ভাগাড় যেখানে মেডিকেল, ইলেকট্রনিকসহ সব ধরনের বর্জ্য ফেলা হয় এবং দুটো ভাগাড়ই প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি বা কৌশল অনুসরন করা হয় না বলে এগুলো বদ্ধ স্তূপে পরিনত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রতিদিন প্রায় ৬২৫০ টন বর্জ্যের সৃষ্টি হয় কিন্তু কর্পোরেশনের বর্জ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতার অভাবে বর্জ্যের বিশাল একটা অংশ খোলা ড্রেন, ডোবা-নালা এবং নদনদীতে পতিত হয়।
গণমাধ্যমসমূহ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময়ে ঢাকা এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি।
তবে জিএআইএ’র নতুন এই তথ্য আশার আলো হয়ে উঠতে পারে যদি কার্যক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। ফলে শহরগুলো বর্জ্যমুক্ত হয়ে হয়ে ফিরে পেতে তার সুস্থ পরিবেশ এবং সৃষ্টি হতে পারে নতুন কর্মসংস্থান।
আপনার মতামত জানানঃ