জনজীবন তথা অর্থনীতির উপর করোনা সংকটের কুপ্রভাব নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই৷ এমন প্রেক্ষাপটে সংকটের মোকাবিলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ বিশেষ করে ইউরোপের বর্তমান করুণ পরিস্থিতির আলোকে সমালোচকরা দাবি করছেন যে করোনা টিকার অভাব মেটাতে ঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি৷ ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে টিকাদান অনেক পিছিয়ে রয়েছে এবং ভ্যাকসিনের ক্রয় ও বিতরণে বিলম্বের কারণে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন টিকা সম্পর্কিত তার মতামত জানিয়েছেন।
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেন, আমরা ইউরোপীয়রা সম্মিলিতভাবে ভ্যাকসিন অর্ডার দিয়েছিলাম। আমি ভাবতেও পারি নি যে, বড় বড় সদস্য দেশগুলি সমস্ত ভ্যাকসিন নিয়ে নেবে আর অন্য সবাইকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।। এরকম যদি হয়, তাহলে আমাদের ইউরোপীয় বাজার এবং ইউরোপের সব দেশের মধ্যে একতা কোথায়”?
১০৫ বছর বয়সী এলিজাবেথ স্টুবেস্যান্ড বলেন, এই টিকা খুবই ভাল এবং যদিও আমি বুড়ো হয়েছি, তাও আমি এই টিকা নিচ্ছি, এবং আমার ইচ্ছা অনেক, অনেক লোক এই টিকা নেবে। অনেক ইউরোপীয়রা এই ভ্যাকসিন নিতে চাইছে, তবে সরবরাহের ঘাটতির এক প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই ভ্যাকসিন বিতরণ এবং মানুষের শরীরে এর প্রয়োগ হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে, এবং এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক রাজনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে, প্রথম ভ্যাকসিনের ডোজ যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ এবং ব্রিটেনে ১৭ শতাংশের তুলনায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশেরও নিচে মানুষদের এই টীকা দেওয়া হয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ম্যাট বেভিংটন বলেন, আপনি বলতে পারেন যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির সাথে সমঝোতা চুক্তি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি, কিন্তু যখন অনুমোদনের বিষয়টি আসে,তখন কিন্ত এটি একটি সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল। তারা জানত যে, এটি প্রক্রিয়া খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে এবং তারা এটাও জানত যে, এরপরে এই ভ্যাকসিন গুলি বাজারে চালু হওয়ার সময় এটির উপর যথেষ্ট প্রভাব পড়বে, এবং আরও বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেহেতু ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে একটা নয়, বিভিন্ন সংস্থা যুক্ত রয়েছে, এই ধরণের সমস্যা যে হবে তা আগে থেকেই প্রচার করা হয়েছিল।
এক সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলে চলমান সংকটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির এক ভয়াবহ খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে৷ সেই রিপোর্ট অনুযায়ী টিকাদান কর্মসূচি যথেষ্ট দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলে চলতি বছরে ক্ষতির মাত্রা ৯,০০০ কোটি ইউরো পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ আলিয়ানৎস বিমা কোম্পানি ও অয়লার হ্যার্মেস ঋণ বিমা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে এমন পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে৷ সেই গবেষণা অনুযায়ী টিকাদানে যত বিলম্ব হবে, অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা ততই বাড়বে৷ টিকাদানের বর্তমান হারে গতি আনতে না পারলে ২০২২ সাল পর্যন্ত জনজীবন স্বাভাবিক হবে না৷
ইউরোপে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী ওষুধ সংস্থাগুলি বিদেশে তাদের ভ্যাকসিন পাঠানোর আগে যাতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে, সেটা নিশ্চিত করতে, ব্রাসেলস রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ইইউ আইনবিদদের কাছে গিয়ে এই কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন স্বীকার করেছেন যে, ভুল হয়েছে। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেন, আমাদের অনুমোদন দিতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। যখন এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন বিশাল সংখ্যায় করা হচ্ছিল, তখন আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম এবং আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, আমরা যে সংখ্যায় সরবরাহের আদেশ দিয়েছি তা আসলে সময়মতো পৌঁছে দেওয়া হবে।
এরআগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে ইইউ’র এর এই সিদ্ধান্তে মহামারি দীর্ঘায়িত হবে।
টিকা সরবরাহে বিলম্বের কারণে ইউরোপের দেশগুলো তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না। এ নিয়ে বিরোধের জেরেই ইইউ সদস্যদেশগুলোতে উৎপাদিত টিকা রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস বলেন টিকা জাতীয়করণ করা হলে মহামারির অবসান হতে আরও দীর্ঘসময় লাগতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ