ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরোর দাম আরো কমেছে। ২০০২ সালের পর ইউরোর দাম কখনো এতটা কম হয়নি।
গত ২০ বছরের মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর পতন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার তীব্র জ্বালানি সঙ্কটের সঙ্গে ইউরোর অবিশ্বাস্য দরপতন ইউরোপের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর বড় আকারের প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইউরোর বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ১ দশমিক ০১৮৪৫ ডলার। বুধবার এটি ১ দশমিক ০২ এ নেমেছিল। সর্বশেষ ইউরোর দর পতন এ পর্যায়ে যায় ২০০২ সালে।
ইউরোর দর পতনে ডলার সূচক অভাবনীয় হারে বেড়েছে। ৬টি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বিবেচনায় এই সূচক নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইউরোর পাশাপাশি জাপানের ইয়েন, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিং, কানাডার ডলার, সুইডিশ ক্রোনা ও সুইস ফ্রাঁকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই সূচক ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৭ দশমিক ২৭ এ পৌঁছায়। দিন শেষে এটি ১০৭ দশমিক ০৩ এ এসে স্থিতিশীল হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ জানান, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য দেশটিকে দ্রুত টেকসই জ্বালানির দিকে আগাতে হবে। শুলজ মত প্রকাশ করেন, ইউক্রেনের যুদ্ধে ফায়দা পেতে রাশিয়া জ্বালানিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
এমন এক সময় ইউরোপের অর্থনীতিতে দুর্যোগ নেমে এসেছে যখন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মত ঋণের খরচ (ঋণদাতাকে প্রদেয় সুদের হার) বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
এ পরিস্থিতিতে, ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মূল্য গত মাসের শেষের দিকে ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রতি ডলারের বিপরীতে ১৩৭ ইয়েন পাওয়া যাচ্ছিল সে সময়। তবে বৃহস্পতিবার এই হার কমে ১৩৫ দশমিক ৭৯ ইয়েনে পৌঁছেছে।
ইউরোপের দেশগুলোতে এখন জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিও বেসামাল হয়ে গেছে।
ইউরোপের দেশগুলোতে এখন জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিও বেসামাল হয়ে গেছে।
ইউরো বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রচলিত মুদ্রা। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সাধারণ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত। ইইউ-এর ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৯ দেশে এই মুদ্রার প্রচলন রয়েছে। যেসব দেশে ইউরো চলে, তার মধ্যে ‘ইউরোজোন’ বলা হয়। এছাড়া কসোভো, মন্টেনিগ্রো ও ভ্যাটিকান সিটিতেও ইউরোর চল রয়েছে।
ইউরোজোনে ইউরোপের ১৯টি দেশ রয়েছে। সেখানে মন্দার সম্ভাবনা বাড়ছে।
সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ইউরোজোনে বাণিজ্যিক বৃদ্ধির হার কমেছে। জীবনধারণের খরচ বেড়েছে। এর ফলে জিনিসের চাহিদাও কমছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের সমীক্ষা অনুযায়ী, মে মাসের ইউরোজোনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল ৫৪ দশমিক আট, জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫২-তে।
সংস্থার চিফ বিজনেস অ্যানালিস্ট ক্রিস উইলিয়ামসন বলেন, দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার উৎপাদন শিল্প নিচের দিকে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া বাজারে পড়ছে। জিনিসের দামও বাড়ছে। অত্যাবশ্যক নয় এমন জিনিস চাপের মুখে পড়েছে।
গত সোমবার ইউরোজোন সেন্ট্রাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবধান করে দিয়ে বলেন, এরপর যদি শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেয়, তাহলে মন্দা আসতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৩
আপনার মতামত জানানঃ