মাদকের সাথে পুলিশের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ দিনদিন আরো চাউর হয়ে উঠছে। পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। এবার সীমান্ত পার হয়ে মাদক চোরাকারবারি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পঞ্চগড়ের ঘাগড়া সীমান্তের মমিনপাড়া এলাকা থেকে ওমর ফারুক (২৪) নামের এক পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল) ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে নীলফামারী ৫৬ বিজিবির আওতাধীন ওই সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৩ এর ৭ ও ৮ নং সাব পিলার এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদক চোরাকারবারি করতে গিয়ে ধরা পড়েন ওই পুলিশ।
কনস্টেবল ওমর ফারুক পঞ্চগড় পুলিশ লাইনসে কর্মরত। তিনি পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের বিচারকদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন বলে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাস আহমদ নিশ্চিত করেছেন। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সীমান্ত এলাকার একটি বাজার থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ওমর ফারুকের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান ওসি।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি মোটরসাইকেলযোগে ফারুকসহ তিনজন মমিনপাড়া সীমান্তে যান। এ সময় মমিনপাড়া সীমান্তের বিপরীতে ভারতের সিপাইপাড়া মহল্লার ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে তাদের তর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাংলাদেশি ঘাগড়া বিবিজি ক্যাম্পের বিপরীতে ভারতের চানাকিয়া বিওপির বিএসএফ সদস্যদের খবর দেয় সেদেশের নাগরিকরা। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ভারতীয়রা ধাওয়া দিলে দুইজন পালিয়ে আসেন, তবে ফারুককে আটক করে বিএসএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেন ভারতীয়রা।
স্থানীয়দের দাবি, মোশারফ হোসেন নামে এক পুলিশ সদস্যকে প্রায়ই ওই সীমান্তে দেখা যায়। তিনি ফারুকসহ অন্য দুইজনকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যান। মোশারফ ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানান স্থানীয়রা।
ঘটনাস্থলের পাশের এলাকার বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল রাতে ওমর ফারুকসহ তিনজন ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়ান। এ সময় তারা একজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতকড়া পরাতে গেলে ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করে ওমর ফারুককে আটক করেন। এ সময় অন্য দুজন পালিয়ে যান।
ঘাগড়া সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মো. রুহুল আমিন জানান, আমরা এ ব্যাপারে স্থানীয়দের কাছে শুনেছি। তবে তিনি কেন ভারতীয় সীমান্তে গেছেন আমরা জানি না। আমাদের বিএসএফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তিনি এখন জলপাইগুড়ির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে এখন পতাকা বৈঠক বা চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাছ আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই পুলিশ সদস্য আদালতে বিচারকদের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার ব্যবহৃত মোটরসাইলেকটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। তার সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন বলে আমরা শুনেছি। তবে কারা ছিলেন এবং কেন সীমান্ত এলাকায় গিয়েছিলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, সীমান্তে মাদক চোরাচালানের সাথে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি দেশের জন্য লজ্জাজনক। দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ প্রায়ই আসে। দেশে ইতিমধ্যে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে শতাধিক পুলিশ অভিযুক্ত হয়েছেন, বরখাস্তও হয়েছেন অনেকে। এমন সময়ে সীমান্ত পেরিয়ে পুলিশের মাদক চোরাকারবারি করার বিষয়টি দেশের পুলিশের ভাবমূর্তিতে আরেকটি কলঙ্ক যোগ হলো। এবিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তসহ সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টির বিস্তারিত তদন্ত করার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫২
আপনার মতামত জানানঃ