
গত বছরের শেষদিকে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমসের জামান ভূইয়া রিটনের বিরুদ্ধে ভাইস চেয়ারম্যানদের সম্মানী ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ভাতা আত্মসাত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চেয়ারম্যান পদ থেকে অবশেষে সমসের জামান ভূঁইয়া রিটনকে অপসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
গতকাল রবিবার(১৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-২ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করেন। প্রজ্ঞাপনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জাহাঙ্গীরকে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিষদের আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়।
সমসের জামান ভূঁইয়া রিটন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তার বিরুদ্ধে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের সম্মানী ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে অপরসারণ করা হয়। এরআগে এ ঘটনায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানরা বিষয়টির আইনগত সুরাহা চেয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-২ শাখায় ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বেলাব উপজেলার পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জাহাঙ্গীর ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার খালেদা প্রতি মাসের ৩-৪ তারিখে সোনালী ব্যাংক বেলাব শাখা থেকে নিজেদের সম্মানী ভাতা উত্তোলন করেন। গত বছরের নভেম্বরের মাসিক ভাতা ২৭ হাজার, ভ্রমণ ভাতা ৮ হাজার এবং আপ্যায়ন ভাতা পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের ৪ হাজার ৪২১ টাকা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ৪ হাজার ৩৬৬ টাকার চেক যথারীতি অফিস সহকারী তৌফিক আফ্রাদের কাছে চাইলে তিনি জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান পুরো চেক বই তার কাছ থেকে নিজের হেফাজতে নিয়ে গেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যানরা বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। পরবর্তীতে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান গত ৪ ডিসেম্বর সকালে ওই টাকা উত্তোলন করে ফেলেছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনিও চেয়ারম্যানকে দ্রুত সুরাহা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিষয়টি কোনো সুরাহা হয়নি।
এ ঘটনায় দ্রুত আইনগত সুরাহা চেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার খালেদার প্যাডে দু’জনই স্বাক্ষর করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগের অনুলিপি দেন তারা।
সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা চেয়ারম্যান সমসের জামান ভূঁইয়া রিটন বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানরা নির্বাচনের সময় তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এক মাসের সম্মানী পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর মাজারে অনুদান দিয়েছেন। আমি সেটা উত্তোলন করে মাজারের উন্নয়নে খরচ করেছি। কিন্তু কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। ওই মাজারের প্রধান খাদেম আমি। এখন তারা ষড়যন্ত্র করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। আমি একাধিকবার এই টাকা ফেরতও দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা নেয়নি।
এসব ছাড়াও চেয়ারম্যান সমসের জামান ভূঁইয়া রিটনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে মাদক সেবন ও চাঁদাবাজিসহ আরো অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সরকারি চাল, গম, অর্থ ইত্যাদি তাদের হাত হয়ে যাওয়ার ফলে প্রাপ্যরা সহজেই প্রতারিত হন। সরকারদলীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়াতে তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতেও সাহস পায় না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা সহজেই টাকার কুমির বনে যায়। এসবের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পর্যবেক্ষণ ও সুষ্ঠু তদারকির আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ