দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। যে যার সুযোগ সুবিধামতো প্রতারণা করে কিংবা অপকৌশলে টাকা আত্মসাতের ধান্দায় নেমেছে। আর এসবের সাথে জড়িতরা অধিকাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তি। প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে নিজেদের আখেরি গোছানোর এক নিদারুণ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে গড়ে নিয়েছেন নিজেদেরই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা নিজেদের হস্তগত করার এক রীতি দাঁড়িয়ে গেছে দেশে। তেমনি এক অভিযোগ শোনা গেলো আমিন জুট মিলে। পাট না কিনেও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে আমিন জুট মিলের বকশীগঞ্জ ক্রয় কেন্দ্রে। কাগজ-কলমে পাট কেনার কথা উল্লেখ করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আমিন জুট মিলের তত্কালীন উপমহাব্যবস্থাপক আ. রাজ্জাক। এ ঘটনায় উপমহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলেও টাকা আদায়ে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই ওই টাকা আদায়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
গতকাল রোববার(১৪ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সালমান এফ রহমান, আহসানুল ইসলাম (টিটু), মুস্তফা লুৎফুল্লাহ্ এবং ওয়াসিকা আয়শা খান অংশ নেন।
কমিটি সূত্র জানায়, ২০০১২-১৩ অর্থবছরের ওই অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনাকালে জানানো হয়, ওই সময় এই আত্মসাতের ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাককে বরখাস্ত করে। পরে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করলেও ২০১৬ সালে তা খারিজ হয়ে যায়। বিজেএমসি বলেছে, নথিতে বেশি ক্রয় দেখানো হলেও বাস্তবে টাকা আত্মসাৎ হয়নি। বিজেএমসির ওই বক্তব্য গ্রহণ করেনি অডিট দপ্তর। পরে কমিটি এই টাকা আদায়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকার করিম জুট মিলে অনুমোদিত সীমা অপেক্ষা পাটের ওজন ও মানজনিক ক্ষতি বেশি হওয়ায় ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। হাফিজ জুট মিলের গুদামে সমাপনী মজুদের বিভিন্ন কোয়ালিটির ৪৫৬ মেট্রিক টন পাট ঘাটতি হওয়ায় সরকারি অর্থের তিন কোটি ৬৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। খুলনার স্টার জুট মিলে পাট কেনায় ক্ষতি ও ঘাটতির হার মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় ৮০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। কমিটি দ্রুত এসব অর্থ আদায় করতে বলে।
এছাড়া বৈঠকে স্বাস্থ্য অডিট অধিদফতরের আওতাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির ২০১১-২০১২ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত ৬৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এই টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা ২ মাসের মধ্যে জমা দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলে, আমিন জুট মিলে বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই লোকসানের মধ্যে রয়েছে। তারা বলেন, কেবল আমিন জুট মিল নয়, বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও পরিকল্পনা এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাবে দেশের প্রায় সমস্ত জুট মিলই ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এসবের সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের প্রতারণা সামনে এলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে কাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে আছে।
তারা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানের রাঘব-বোয়ালেরা মাৎসান্নায়ের মতোই গিলে খাচ্ছে সবকিছু। দেশের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে বিভিন্ন প্রতারণার কৌশল নিয়ে, জালিয়াতি করে, অনিয়ম করে প্রতিষ্ঠানের লোকজন লুটপাটে অংশ নেয়নি। তারা মনে করেন, দেশে টাকা লুটপাটের এক গোপন প্রতিযোগিতা চলছে। যার ফলে একজন ডিসির ড্রাইভারকেও কোটিপতি বনে যেতে দেখি। দেশের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে সরকারসহ দেশের সচেতন মহলকেও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০২
আপনার মতামত জানানঃ