জসিম উদ্দিন : গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সামনে এসেছে। এর মূল কারণ ‘জাতিকে বিভক্ত করার প্রয়াস’। দেশের মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানোর কাজটি ঘোরতরভাবে হয়েছে। অন্য দিকে জনগণের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সংবাদমাধ্যমে ঘোরতর কোনো প্রয়াস দেখা যায় না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মিডিয়ার যে কন্টেন্ট তাতে এ জাতিকে অতীতমুখী ঝগড়াপ্রবণ একটি জাতি হিসেবে অন্যরা সহজে চিহ্নিত করতে পারবে। অতীতের গৌরবোজ্জ্বল একটি জাতির ভবিষ্যৎও গৌরবোজ্জ্বল হতে হবে। একটি জাতি কেবল অতীতে কোনো একসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু করতে পেরেছে এমন ধারণার মধ্যে কোনো স্থায়ী কল্যাণ নেই। তাকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভবিষ্যতেও কিছু করতে হবে। অতীতের দুর্গন্ধ নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করে উপস্থিত সমস্যার সমাধানে বেশি উৎসাহী হতে হবে।
সঙ্কীর্ণ স্বার্থে মিডিয়া পরিচালিত হওয়ায় অস্বস্তি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে। মিডিয়া মালিকানা পাওয়ার জন্য সরকার কী বিবেচনা করবে তার মানদণ্ড থাকা দরকার। একজন ব্যবসায়ী যদি তার ব্যবসা রক্ষার জন্য মিডিয়া চালানোর ফন্দি করেন তা হলে কখনো জাতীয় স্বার্থ পূরণ হবে না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিস্ফোরণের ফলে অনেক দেশে জমির ব্যবসা ও দালানকোঠা বানানো অত্যন্ত লাভজনক হয়ে ওঠে। এমন অনেক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা দেখা যায় যারা মানুষের জমি দখল করে কিংবা পানির দরে কিনে আকাশচুম্বী দামে বিক্রি করে দেন। এমন জবরদস্তিমূলক কাজ করতে গিয়ে তাদের বিপুল প্রভাব প্রতিপত্তির দরকার হয়।
মিডিয়ার মালিকানা কিনে এই প্রভাবপ্রতিপত্তি অর্জন করলে সে মিডিয়া কখনো দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিক্রি হয়ে গেলেও খবর দেয়ার প্রয়োজন মনে করবে না। বরং এ ধরনের মিডিয়া মালিকরা নিজেদের জমি কেনাবেচার স্বার্থে খবর দিতে উৎসাহী হবেন। এমন অবস্থারও সৃষ্টি হতে পারে, রোম যখন পুড়বে নিরোরা তখন বাঁশি বাজানোতে ব্যস্ত থাকতে পারেন। এমনও হতে পারে, মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ যদি এ ধরনের বণিকদের হাতে চলে যায় তা হলে একে অপরকে মোকাবেলা করার জন্য এই মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ দুই মিডিয়ার মালিক যদি একই জমি দখল করে বেআইনি ব্যবসা করতে চান, তা হলে দুটো মিডিয়া একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লেগে যেতে পারে। প্রতিদিনকার খবর প্রচার করার চেয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর কাজ তারা করতে পারে। এর ফলে জনগণের জানার অধিকার চাপা পড়ে থাকবে।
মিডিয়া মালিকানা দেয়ার প্রধান মানদণ্ড যদি সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেম হয় তা হলে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। আমাদের দেশে আপাতত এটা কম দেখা যাচ্ছে। জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান সঙ্কটগুলো যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বাংলাদেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমে দেখা যায় না। বিরোধী দলের একজন নেতা খোদ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে বসে সেই টেলিভিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন; তারা অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার টেনে আনেন। বিরোধীদের ক্রমাগত তারা হেয় করার ফাঁক খোঁজেন। সাম্প্রতিক সময়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ঐক্য দেখা যাচ্ছে। ওই চ্যানেলটি তারা ঘোষণা দিয়ে বর্জন করছেন। মিডিয়া নিয়ে এভাবে প্রকাশ্যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়া বিপজ্জনক। একটি চ্যানেল কেউ দেখবে কি না গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি অনুযায়ী সেটি তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ক্ষুব্ধ হয়ে জোট বেঁধে চ্যানেল ‘আনসাবস্ক্রাইব’ করার ঘটনা নজিরবিহীন। ঘটনাটি কেন ঘটল তার উপলব্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চ্যানেলটির বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনছেন। তাদের ওই সব অভিযোগের ব্যাপারে চ্যানেলটির পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য-প্রমাণ ও যুক্তি থাকতে হবে। বরং এমন সব ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হচ্ছে যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। তাদের দ্বারা অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও আক্রান্ত হয়েছেন।
উপমহাদেশের সাংবাদিকতার সাম্প্রতিক অবস্থা যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরাই সবচেয়ে দুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। নিজেদের স্বার্থরক্ষায় এ দেশের সাংবাদিক নেতৃত্বও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি। সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, চাকরির নিশ্চয়তা, সামাজিক মর্যাদা কোনোটিই তারা সম্মিলিতভাবে রক্ষা করতে পারেননি। সাংবাদিকরা যেখানে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছেন না, তারা কিভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবেন? নিজেদের অচেতন-সচেতনভাবে ঘৃণা ছড়ানোর কার্যক্রম নিজেদেরই বড় দাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। ফলে নিজ ভাইয়েরা যখন অধিকারহারা তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর কোনো ‘ফেলো ফিলিংস’ তাদের আজ আর নেই। পক্ষকাল-এর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল চলতি বছরের ১০ মার্চ গুম হয়ে যান। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাকে পাওয়া যায় ভারত সীমান্তে। তার অন্তর্ধানের ঘটনাটি ঘটে এমন এক সময় যখন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা দেয়া হয়েছিল। অনলাইনে তিনি ‘অবমাননাকর পোস্ট’ দিয়েছেন বলে ওই সব মামলায় অভিযোগ আনা হয়। সীমান্তে চোখবাঁধা অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। দীর্ঘ দিন নিখোঁজ থাকার পর তাকে পাওয়া যাওয়ায় রাষ্ট্র্রের পক্ষ থেকে কিছু দয়া অনুকম্পা তিনি পাবেন এমনটিই প্রত্যাশিত ছিল। তাকে কোন গোষ্ঠী গুম করে রেখেছিল সে ব্যাপারে দেশের গোয়েন্দারা স্বাভাবিকভাবে তদন্ত চালানো উচিত। সেই অবৈধ চক্রকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনার কথা, একজন সাংবাদিককে গুম করার জন্য। সে ধরনের কিছু দেখা গেল না। দীর্ঘ দিন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় কাজলের শারীরিক মানসিক অবস্থা যখন পর্যুদস্ত তাকে ৫৪ ধারায় আবারো গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশের মানুষ গুম হওয়ার পর সীমান্তে থেকে কেন পাওয়া যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি। এর আগে বিএনপির এক প্রভাবশালী সদস্যকে দীর্ঘ দিন গুম থাকার পর ভারতের সীমান্তের ভেতরে পাওয়া যায়। পরে বন্ধুরাষ্ট্র ভারত নির্যাতিত বিরোধীদলীয় এই শীর্ষস্থানীয় নেতার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার খোঁজখবরের চেয়ে একজন অপরাধী হিসেবে তার বিচার করতে বেশি উৎসাহী ছিল। ভারত সরকারের মতে, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন। এই হলো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। অথচ তিনি বাংলাদেশের একজন অতিপরিচিত ব্যক্তি। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখপাত্র ছিলেন। এসব পরিচিতি ভারত সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য ভারত সরকার তার বিরুদ্ধে শক্ত বিচারের আয়োজন করে। এর আগে বাংলাদেশের বিচারাঙ্গন থেকে গুম হওয়া এক ব্যক্তিকে পরে রহস্যজনকভাবে পাওয়া যায় ভারতের কারাগারে। এসব মানুষ বাংলাদেশে গুম হওয়ার পর কিভাবে ভারতের চলে যাচ্ছে তার কোনো হদিস মেলাতে পারছে না ভারত ও বাংলাদেশ কেউই। তবে এসব মজলুম মানুষের বিচার করতে উভয় দেশই খুব উৎসাহী। এসব রহস্যজনক ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়াও আগ্রহ দেখায় না। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে মিডিয়া সচেতনতা দেখায় না বলে পাঠক দর্শক শ্রোতারা বাংলাদেশের মিডিয়ার বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলতেই পারেন।
বাংলাদেশে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনের গতি দুর্বল। অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ কারণে দেশে এসব অপরাধ অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কাজলের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার এবং তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিকার আদায় করতে পারেননি। এদেশের বিভক্ত সাংবাদিক সাম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের কাছে শক্তিশালী দরকষাকষি করতে নিকট অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) সাংবাদিক হিসেবে কাজলের মৌলিক মানবাধিকারের উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পত্র লিখেছে। ওই পত্রে তারা কাজলের গুরুতর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত। কাজলের ছেলে জানায়, ৫২ দিন অজ্ঞাত স্থানে থাকার পর তার বাবার শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার বাম হাতটি অকেজো হয়ে গেছে। তিনি রক্তবমি করছেন। অক্টোবরের ১ তারিখে লেখা ওই চিঠিতে সিপিজের নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমুনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেপরোয়া প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা কাজলের বিপক্ষে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানান ওই পত্রে। তার গুরুতর অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে জামিন পাওয়ার অধিকারের কথা তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
এর আগেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংবাদিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দৈনিক সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদ দীর্ঘ দিন কারাগারে রয়েছেন। বৃদ্ধ ও অসুস্থ এই সাংবাদিক কারামুক্ত হলে আইনশৃঙ্খলার কী অবনতি ঘটাতে পারেন সেই প্রশ্ন থাকছে। দেশের প্রধান দু’টি পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে একযোগে অসংখ্য মামলা হতে দেখা গেছে। ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের করা ওই সব মামলা বিচারকরা আমলে নিয়েছেন। এসব মামলায় হাজির হতে গিয়ে বর্ষীয়ান এসব সম্পাদককে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তারও আগে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদকের বিরুদ্ধে ঠিক একই ধরনের মামলায় নির্যাতন নেমে এসেছিল। তিনি রাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হন। শারীরিক মানসিক নির্যাতনে পড়ে তিনি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সর্বশেষ দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ‘হেলমেট বাহিনী’ সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটায়। তখন এএফপির স্থানীয় এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে বিচার আদায় করা গেছে কি? সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের এক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অথচ তার বিচার পাওয়ার জন্য জোরালো আওয়াজ তোলা যায়নি।
টিভি চ্যানেল- চ্যানেল ওয়ানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিক নেতাদের নীরবতার মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হলো দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন ও আমার দেশ পত্রিকা।
এসব গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ সরকারের নেই। প্রশাসনিক আদেশে এগুলো একদিন হঠাৎ আর সম্প্রচার কিংবা প্রকাশিত হতে পারল না। এসব মিডিয়া যখন বন্ধ করা হচ্ছিল সাংবাদিক নেতারা সরকারের কাছে এ ন্যূনতম দাবিটিও জোরালোভাবে জানাতে পারেননি, ব্যাপারটা যাতে আদালতে ফায়সালা হয়। টেলিভিশন মালিকরা, সংবাদপত্র মালিকরা, সম্পাদক পরিষদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভগ্নাংশগুলো, কাউকে জোরালো দাবি নিয়ে মিডিয়া ও সাংবাদিক রক্ষায় এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ফলে শত শত সাংবাদিক হয়েছেন বেকার।
প্রধান দু’টি রাজনৈতিক শিবিরে ক্ষমতাসীনদের ‘একেবারে কাছের সাংবাদিক’ হিসেবে অনেকে পরিচিত। এখনো অনেক সাংবাদিক নেতা রয়েছেন যারা ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। কিন্তু এতসব মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া সাংবাদিক হয়রানির কোনো প্রতিকার মিলছে না। এগুলো যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র্রের ভাবমর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমনটি কেউ জোরালোভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরেনি। বাংলাদেশে সাংবাদিক কমিউনিটি এখন বিশাল। কিন্তু তারা অনেকটাই অভিভাবকহীন। ক্ষমতার পালাবদলে অনেকের অবস্থা আপাতত খুব ভালো থাকলেও মোট মিলিয়ে সবার জন্য এ পেশাটি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি রচনায় এদেশের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তখন গুটিকয়েক দৈনিক পত্রিকা ও সামান্য সংখ্যক সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা ছিল। ওই স্বল্পসংখ্যক গণমাধ্যম জাতীয় স্বার্থে একমত হতে বিলম্ব করেনি। আদর্শিক মত-পথের ভিন্নতা জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে তারা অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন। এরপর পাঁচ দশক অতিবাহিত হয়েছে। আজ দেশে গণমাধ্যমের ছড়াছড়ি। শত শত জাতীয় আঞ্চলিক পত্রিকা। অর্ধশত টেলিভিশন চ্যানেল। আর রয়েছে আমাদের অসংখ্য জাতীয় সমস্যা। এসব সমস্যার যদি সমাধান করা না যায়, তা হলে জাতি হিসেবে আমাদের সামনে অন্ধকার। পূর্ব দিক থেকে নিপীড়ক রাষ্ট্র মিয়ানমার এগিয়ে আসছে। তিন দিক ঘিরে রেখেছে বৃহৎ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভারত। দু’টি রাষ্ট্রই আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। শতধাবিভক্ত দুর্বল একটি জাতিকে এই দু’টি রাষ্ট্র সমমর্যাদা দিতে রাজি নয়। মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। সীমান্তে সামরিক তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। আমাদের ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারত সামরিক ও আর্থিকভাবে মিয়ানমারকে সাহায্য করে যাচ্ছে। আর ভারত সীমান্তেও বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে।
বাইরের এসব হুমকি আমরা মোকাবেলা করতে পারছি না। এই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য সমস্যা। এসবের বেশির ভাগ জাতিকে বিভক্তকারী। মিডিয়া ও সরকার এসব বিভক্তকারী অ্যাজেন্ডা থেকে সরে আসতে পারছে না। সরকারকে নিজেদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী দেখা যায়। অপরাধ গুরুতর না হলেও সেটাকে বড় করে দেখা হয়। সরকার নিজে নাগরিকদের ওপর নিপীড়ন চালায়। ঘরের ভেতরের সদস্যদের দমানোর জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগে সরকারের সর্বোচ্চ মনোযোগের ব্যাপারটি প্রতিবেশী দেশগুলো জানে। এ সুযোগ তারা কাজে লাগায়। প্রকৃত হুমকির প্রতি আমাদের বন্দুকের নলটি তাক করা নেই। ফলে শত্রুদের তাক করা বন্দুকটি নির্বিঘ্নে আমাদের প্রতি গুলিবর্ষণ করে যাচ্ছে। তাতে আমরা প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হচ্ছি।
জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার পৃথিবীর সব দেশে স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এ অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। সত্য জানানোর জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন, সবার এটিই প্রত্যাশিত। সংবাদমাধ্যম যদি মতপ্রকাশ করতে না পারে তা হলে জনগণকে আসলে ‘বোবা’ বলতে হবে। তাই সাংবাদিকতাকে বোবা জনগণের ভয়েস বলা হয়। এটি কর্তৃপক্ষ ও জনগণের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ