রাজধানীর তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুর থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ সেকেন্ড ইন কমান্ড ও চার নির্বাহীকে আটক করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার এটিইউ’র গণমাধ্যম শাখা থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সংগঠনটির সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ কামাল হোসেন, মামলা ও কারা দপ্তরের নির্বাহী সোহেল রানা, গাজীপুরের বিভাগীয় নায়ক রবি আহমেদ পাপ্পু, দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান খালেকুজ্জামান, মামলা ও কারা দপ্তরের সহযোগী মনিরুজ্জামান ওরফে মিলন।
এটিইউ’র এসপি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ফার্মগেট তেজতুরী বাজার সংলগ্ন প্যাসিফিক হোমস টাওয়ারের নিচতলা থেকে জঙ্গি সংগঠনটির সহ-অধিনায়ক কামাল ও নির্বাহী সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যানুসারে, মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার শেরে বাংলা রোডে অভিযান পরিচালনা করে অন্য ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, ভিসা কার্ড ও কারাবন্দিদের টাকা প্রদানের স্লিপ এবং ৩৭ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কামাল হোসেন ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আল্লাহর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে সংগঠনের প্রধান মতিন মেহেদীর কাছে শপথ গ্রহণ করে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলায় এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন।
২০০০ সালে মতিন মেহেদীর মাধ্যমে সংগঠনে যোগ দেওয়া খালেকুজ্জামান ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলায় এবং ২০১৭ সাল থেকে ঢাকা জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি কেন্দ্রের দাওয়াহ্ দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আটক মনিরুজ্জামান ১৯৯৯ সাল থেকে মতিন মেহেদীর একান্ত সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। সোহেল রানা ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তারা আল্লাহর দলের গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে মামলা বিষয়াবলী দেখাশোনা, কারাবন্দি ও তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতায় নিয়োজিত ছিলেন। আটক রবি আহাম্মেদ পাপ্পু ২০১৮ সালে আল্লাহর দলে যোগদান করেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে গাজীপুর জেলায় বিভাগীয় নায়েক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ধীরে ধীরে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছে ‘আল্লাহর দল’৷ সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কত তা এখনও নিশ্চিত হতে না পারলেও অন্য জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে এটি বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলেই ধারণা তাদের৷ রিক্রুটমেন্টের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের টার্গেট করে ‘আল্লাহর দল’৷ ট্রেইনড’ বাহিনী গড়ার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের দলে ভেড়ানো তাদের কৌশল৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি তালিকায় আল্লাহর দলসহ আটটি সংগঠন রয়েছে৷ জঙ্গিরা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী পক্ষ পরিবর্তন বা নতুন গ্রুপে যোগ দিয়ে কাজ করে৷ আল্লাহর দলের ব্যাপারে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে তাই প্রতীয়মান হয়৷ তারা প্রথমে স্বাধীনভাবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরে জেএমবির সাথে কাজ করে৷ জেএমবি দুর্বল হওয়ার পর এখন তারা আবার আলাদাভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে৷ এটা তাদের আরেকটি কৌশল৷ জঙ্গিদের আরেকটি কৌশল হলো যখন কোনো একটি গ্রুপ পরিচিত হয়ে যায়, চাপের মুখে পড়ে, তখন তারা নতুন নামে অথবা নতুন কৌশলে কাজ করে৷ তাই নতুন নতুন জঙ্গি গ্রুপের নাম আমরা জানতে পারি৷ তাদের নিষিদ্ধ করলেই তো তারা আর শেষ হয়ে যায় না৷ তারা নানাভাবে তাদের তৎপরতা চালাতে চেষ্টা করে৷
উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত সদস্যরা দেশের বর্তমান নির্বাচনী ও ভোটাধিকার ব্যবস্থা বিশ্বাস করে না এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে তারা শয়তানের দল বলে অভিহিত করে। তারা দেশের সংবিধান ও জাতীয় সংসদকে স্বীকার করে না। তারা নিজেরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে না এবং অন্যকেও ভোটাধিকার প্রদানে নিরুত্সাহিত করে। তারা নারী নেতৃত্বে বিশ্বাস করে না এবং প্রচলিত যাকাত ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে। তাদের মতাদর্শের সদস্যের নিকট থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা উত্তোলন করে দেশ ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তারা ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের আদর্শের অনুকুলে সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩০০
আপনার মতামত জানানঃ