হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের কফিন জুড়ে মিল্কি ওয়ের ছবি এঁকেছিল বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন একজন বিজ্ঞানী।
‘ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ’-এর জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ড. অর গ্রাউর মহাকাশের প্রতি ও প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম সম্পর্কে তার গভীর গবেষণার মাধ্যমে এটা জানার চেষ্টা করেছেন, মিশরীয়দের সংস্কৃতিতে আকাশের তারাভরা ছবি কীভাবে আঁকা হয়েছিল।
তার গবেষণার ফলাফলে ইঙ্গিত মিলেছে, কিছু প্রাচীন শিল্পকর্মে দেখা এক রহস্যময় বাঁকা রেখা হয়তো মিল্কি ওয়ের প্রথম দৃশ্যমান ছবিগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে।
গবেষণায় পাঁচশ ৫৫টি প্রাচীন মিশরীয় কফিনে আঁকা তাদের আকাশ দেবী ‘নুত’-এর একশটিরও বেশি ছবি পরীক্ষা করেছেন ড. গ্রাউর।
মিশরীয়রা নুত’কে সাধারণত এক নগ্ন ও ধনুকের মতো বাঁকা নারী হিসেবে দেখেন, যিনি আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েন ও তার শরীরে তারা বা সূর্যের প্রতীক দিয়ে সাজানো থাকে।
মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, নুত প্রতি রাতে সূর্যকে গিলে খান ও প্রতিদিন সকালে আবার সূর্যের জন্ম দেন। এভাবে মিশরীয়দের দিন ও রাতের চক্রের প্রতীক হয়ে ওঠে নুত। ধনুকের মতো বাঁকা ভঙ্গি ও তারকাখচিত রূপের কারণে মিশরীয়দের কাছে দীর্ঘকাল ধরেই স্বর্গের প্রতীকও ছিলেন নুত।
তবে এক বিশেষ ধরনের মিশরীয় কফিনে কিছু অস্বাভাবিক বিষয় লক্ষ্য করেছেন ড. গ্রাউর। এ কফিনটি ছিল তিন হাজার বছর আগের ‘নেসিটাউদজাতাখেত’ নামের এক নারীর বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ বিশেষ কফিনে নুতের শরীরের পা থেকে শুরু করে হাত পর্যন্ত অন্ধকার এক ঢেউ খেলানো রেখা চলে গিয়েছে। এই রেখার উপরে ও নিচে সমানভাবে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন তারা।
ড. গ্রাউর বলেছেন, এ কালো রঙের বাঁকা রেখাটি মিল্কি ওয়ে, বিশেষ করে এর ‘গ্রেট রিফট’ হতে পারে। এটি মহাজাগতিক ধূলিকণার এক অন্ধকার রেখা, যা রাতের আকাশে মিল্কি ওয়ের এক জ্বলজ্বলে স্ট্রাইপের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে।
‘ভ্যালি অফ দ্য কিংস’-এর বিভিন্ন সমাধিতে থাকা মুরালগুলোতে একইরকম বাঁকা রেখা খুঁজে পেয়েছিলেন ড. গ্রাউর। যার মধ্যে রয়েছে ষষ্ঠ ফেরাউন রামসেস-এর সমাধি। এসব শিল্পকর্মে নুতের পিঠ বরাবর এক সোনালী ঢেউ খেলানো রেখার দেখা মিলেছে, যা আবারও এর আকারের সঙ্গে মিল্কি ওয়ের সম্পর্ক থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছে।
ড. গ্রাউর বলেছেন, নুত নিজেই মিল্কি ওয়ে নয়। তবে নুতের সাজ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে মিল্কি ওয়ের। ঠিক যেমন তার শরীরে তারা ও সূর্যকে ব্যবহার করা হয়েছে। তাকে নিয়ে মিশরীয়দের এই ধারণাটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছেও।
২০২৪ সালের আগের এক গবেষণায় প্রাচীন গ্রন্থ ‘পিরামিড টেক্সট’ ও ‘বুক অফ নুত’ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ড. গ্রাউর। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, মিল্কি ওয়েতে নুতের উপস্থিতি আকাশে সব ঋতুতে ফুটিয়ে তুলেছিল মিশরীয়রা।
এখন, কফিনের শিল্পকর্মের ওপর তার নতুন গবেষণা এ কাহিনিতে আরও এক নতুন পালক যোগ করেছে।
তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জার্নাল অফ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজ’-এ।
আপনার মতামত জানানঃ