যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরণ শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নতুন এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একে একে বহু দেশই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে শুরু করে। বিশ্বের বহুদেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ চালু ছিল। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার একটা করে ফ্লাইট সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। সরকারি নির্দেশনা ছিল, যুক্তরাজ্য থেকে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করতে হবে। একইসাথে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এবার লন্ডন থেকে সিলেটে আগত যাত্রীদের মধ্যে ২৮ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে বলে জানা গেছে। রোববার নমুনা সংগ্রহের পর সোমবার (২৫ জানুয়ারি) তাদের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তারা সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। ওই ফ্লাইটে আসা ১৫৭ যাত্রীকে সাতটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এর মধ্যে ২৮ জনের করোনা শনাক্তের পর তাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল জানান, গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের এক ফ্লাইটে সিলেট আসা ১৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ জনের করোনাভাইরাস পজেটিভ এসেছে।
তিনি জানান, ২১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে সরাসরি ফ্লাইটে সিলেটে আসেন ১৫৭ যাত্রী। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের চার দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়। কোয়ারেন্টিন শেষে গত রোববার তাদের করোনাভাইরাসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে সোমবার রাতে ২৮ জনের পজেটিভ ফল আসে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, ২১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০২ নম্বর ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে আসেন ১৫৭ প্রবাসী। সিলেটে আসার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়। দেশে আসার আগে নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা নেগেটিভ আসে।
তিনি আরও বলেন, আগের নিয়ম অনুসারে তাদের ৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। এ হিসেবে সোমবার তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দিতে রোববার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানো হয়। এতে সোমবার সন্ধ্যায় ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। করোনা সংক্রমিত ২৮ লন্ডন ফেরত যাত্রীর ১৫ জন হোটেল নূরজাহানে, ৫ জন হোটেল ব্রিটানিয়ায়, ৪ জন হোটেল হলিগেইটে, ৩ জন হোটেল লা রোজে এবং ১ জন হোটেল হলি সাইডে অবস্থান করছিলেন।
বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় এসব যাত্রী পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সিলেটের খাদিমপাড়ার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে নতুন স্ট্রেইনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পর চলতি মাস থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনার পর ৪ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লাইটে ৪০০ জন যাত্রী যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসেন। এসব যাত্রীদের স্ব-খরচে থাকার জন্য সিলেটে বেশ কয়েকটি হোটেল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পালন করেছেন ৪১ জন। নতুন নিয়মে কোয়ারেন্টিন শেষ করে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭২ জন বাড়ি ফিরেছেন।
১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত ব্যক্তিদের জন্য নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের সময়কাল কমিয়ে চার দিন এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষার পর নেগেটিভ ফল এলে বাড়ি ফিরে আরও ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এলে তাদের সরকার নির্ধারিত আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে সোমবারও (২৫ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪৩ প্রবাসী। সোমবার দুপুরে ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তাদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ