গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সময় ঋণ ছিল ৩৭০ কোটি ডলারের উপরে। এর মধ্যে গত ৫ মাসে ৩৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধের পরও রিজার্ভ বেড়ে আবার ২১.৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। মূলত নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে পাচার বন্ধে কঠোরতার কারণেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া গত ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। পাশাপাশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে ও বিদেশি ঋণের অর্থছাড়ের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ২ হাজার ৬২০ কোটি ডলারের বেশি। ডিসেম্বরে রিজার্ভ বেড়েছে ২৬২ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে নামে-বেনামি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়। যে কারণে ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ ছিল। এই চাপ মেটাতে বিভিন্ন উৎস থেকে উচ্চ সুদের বিদেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২৪ সালে ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। আগের বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। এ হিসাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯৭ কোটি ডলার বা ২২.৬৯ শতাংশ। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রপ্তানিতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছর যেখানে রপ্তানি আয় কমেছিল ৫.৮৯ শতাংশ। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ই আগস্টের পর থেকে ডলারের দর ১২০-১২২ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। বকেয়া পরিশোধের চাপের কারণে মাঝে কয়েকদিন দর বেড়ে ১২৬ টাকা ছাড়ায়। এরই মধ্যে তা কমে আবার ১২৩ টাকায় নেমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে বছর শেষে ২১.৩৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এর আগে আকুর দায় শোধের পর গত ১১ই নভেম্বর রিজার্ভ নামে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলারে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় রিজার্ভ ছিল ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল ২০২১ সালের আগস্টে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয় ৭.৭২ বিলিয়ন ডলার। পরের অর্থবছর আরও ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও ৯.৪২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সরকার পতনের পর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের পর প্রবাসীরা দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। অর্থ পাচার কমার কারণে হুন্ডিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিনি বলেন, বিপুল অঙ্কের বকেয়া পরিশোধের পরও রিজার্ভ বাড়ার বিষয়টি অত্যন্ত স্বস্তির খবর। শিগগিরই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে আরও বেশ কিছু ডলার যোগ হবে। তখন রিজার্ভ আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। দীর্ঘদিন পর বিপিএম ৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে।
নভেম্বরের শেষদিকে দেশের নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৮ কোটি ডলার ও গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ডিসেম্বরে দেশের নিট রিজার্ভ বেড়েছে ২৬২ কোটি ডলার ও গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে ১৭৪ কোটি ডলার। সমপ্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের ৫০ কোটি ডলার রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে সহায়তা করেছে।
আপনার মতামত জানানঃ