বিশ্বব্যাপী সুপারনোটের বিস্তার এবং জালিয়াতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত জাল নোট ‘সুপারনোট’ এর উৎপত্তি সন্দেহভাজন উত্তর কোরিয়া থেকে, যা সাধারণ চোখে সনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন।
মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ১৯৮৯ সালে ফিলিপাইনে এক সন্দেহজনক ১০০ ডলারের নোট পরীক্ষা করে আবিষ্কার করে যে এটি একটি অত্যাধুনিক জালিয়াতি। এই সুপারনোট তৈরির প্রযুক্তি ‘ইন্টালিও’ প্রিন্টার, যা সাধারণত সরকারী সংস্থার কাছে থাকে। মার্কিন গোয়েন্দারা সন্দেহ করেন, যে কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র বা সরকারী সংস্থা এর পেছনে রয়েছে, এবং তা ধীরে ধীরে উত্তর কোরিয়ার দিকে আঙুল ওঠে।
১৯৯০-এর দশকের পর থেকে, উত্তর কোরিয়া অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। এই সময় তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য অবৈধ পথে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করে। এ উদ্দেশ্যে তারা গোপন সংস্থা ‘অফিস ৩৯’ গঠন করে, যার মাধ্যমে মাদক পাচার, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, এবং জাল ডলার তৈরির মতো কাজ চালানো হত। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের ‘প্রিন্টিং ৬২’ নামক একটি গোপন কারখানায় সুপারনোট ছাপানো হত।
মার্কিন গোয়েন্দারা ২০০২ সালে ব্রিটিশ অপরাধীদের কাছে ৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সুপারনোট উদ্ধারের পর আরও তদন্ত শুরু করে, এবং বিভিন্ন দেশে যেমন হংকং, রাশিয়া ও কম্বোডিয়া, সুপারনোট উদ্ধার হয়। মার্কিন সরকার এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে, এবং তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে নতুন ডিজাইন করা ১০০ ডলারের নোট চালু করে, যাতে অপটিক্যাল ভেরিয়েবল ইনক জলছাপ, ক্ষুদ্র মুদ্রণ প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ফিচার যোগ করা হয়।
২০১৩ সালের পর সুপারনোটের সংখ্যা কিছুটা কমে আসলেও, উত্তর কোরিয়া সাইবার অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি এবং ২০২২ সালে ৬২০ মিলিয়ন ডলার ক্রিপ্টোকারেন্সি গেম থেকে লুটের ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আপনার মতামত জানানঃ