মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। পৃথিবীবাসীর এই আগ্রহের পারদে হাওয়া দিতেই যেন মহাকাশ নিয়ে নিত্যনতুন সব মন্তব্য করেন স্পেসএক্স-এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। সম্প্রতি তিনি আরও একবার মঙ্গল গ্রহ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মঙ্গলে মানব উপনিবেশ গড়ার পর সেখানে সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে তা-ও জানিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (পূর্বের টুইটারে) একজন ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে ইলন মাস্ক বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন মঙ্গলে বসতি স্থাপন সম্পর্কে। নতুন গ্রহে শাসনব্যবস্থা পৃথিবীর মতোই হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মঙ্গলে সরকারব্যবস্থা হবে ‘ডিরেক্ট ডেমোক্রেসি’- যেখানে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নয় বরং মঙ্গলে বসবাসকারীরাই সিদ্ধান্ত নিবে বিভিন্ন বিষয়ে। এটাকেই মঙ্গলের জন্য আদর্শ ও সেরা শাসনব্যবস্থা মনে করছেন তিনি।
মাস্ক বলেন, ‘মঙ্গলবাসীই সিদ্ধান্ত নিবে তাঁদের শাসনব্যবস্থা কেমন হবে। আমি ডিরেক্ট ডেমোক্রেসি’র সুপারিশ করছি।’ অর্থাৎ, পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলে আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক সরকারব্যবস্থা দেখতে চান ইলন মাস্ক। তিনি চান সাধারণ মানুষের হাতে আরও ক্ষমতা থাকুক যাতে করে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতাগুলো এড়িয়ে চলা যায়।
উল্লেখ্য, ‘লাল গ্রহ’ নামে পরিচিত মঙ্গলে মানববসতি স্থাপনের পরিকল্পনা ইলন মাস্কের অনেক দিনের। এই লক্ষ্যে মাস্কের মহাকাশযান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স মঙ্গলে রকেট পাঠাতে চায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে। প্রথমে মানবহীন রকেট পাঠালেও এক সময় রকেটে করে নভোচারী পাঠিয়ে মঙ্গল অন্বেষণেরও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
বড়জোর আগামী দু’বছরের মধ্যেই স্পেসএক্স-এর স্টারশিপ রকেট মঙ্গলপৃষ্ঠে পাঠাতে চান ইলন মাস্ক। সেক্ষেত্রে ২০২৬ সালের মধ্যেই মঙ্গলে পৌঁছতে পারে মাস্কের মানবহীণ (আনক্রুড) স্টারশিপ রকেট। এছাড়া আগামী ৪ বছরের মধ্যে মঙ্গলপৃষ্ঠে প্রথম মানুষ পাঠাতে চান তিনি। অর্থাৎ ২০২৮ সালের মধ্যে মঙ্গলপৃষ্ঠে দেখা যেতে পারে মানুষের পদচিহ্ন।
তবে মাস্কের পরিকল্পনা বেশ অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে। বিশেষ করে স্পেসএক্স-এর স্টারশিপ রকেটের ক্রমাগত উন্নয়নের প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, স্টারশিপ রকেটকে দীর্ঘ-দূরত্বের মহাকাশ অভিযানের উপযোগী করেই তৈরি করা হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি কার্গো বা পণ্য পরিবহণেও সক্ষম এই মহাকাশযান।
মঙ্গলে বসতি গড়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চ্যালেঞ্জকেই সবচেয়ে বড় করে দেখছেন ইলন মাস্ক। নিজেই টিকে থাকতে পারে এমন একটি শহর মঙ্গলপৃষ্ঠে গড়ে তুলতে ১ হাজার ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। সংখ্যাটা কত বড় সেটা বোঝানোর জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট- আমেরিকার বর্তমান জিডিপি ২৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
এত বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন কেননা মানুষের জীবনধারণের মতো পরিবেশ মঙ্গলে তৈরি করতে হলে প্রায় ১ মিলিয়ন টন যন্ত্রপাতি পৃথিবী থেকে এই লাল গ্রহটিতে বহন করে নিয়ে যেতে হবে। এর আগে মাস্ক একবার জানিয়েছিলেন যে, বর্তমান মঙ্গল অভিযানে প্রতি টন পেলোড মঙ্গলে পাঠাতে খরচ হবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি এও বলেছেন যে, মঙ্গল অভিযানকে আর্থিকভাবে সম্ভব করে তুলতে হলে রকেট ও মহাকাশযান প্রযুক্তিতে ১ হাজার গুণ উন্নতি সাধন করতে হবে।
আর্থিক খরচের বিষয়টিই মানুষের মঙ্গল অভিযানে সবচেয়ে বড় বাধা হিসবে এখন পর্যন্ত প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা বর্তমান খরচে মঙ্গলে মানুষ ও পণ্য পাঠিয়ে সেখানে একটি কলোনি স্থাপন প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। তবে ইলন মাস্ক বরাবর-ই আশাবাদী ব্যক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেটে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। ফলে আপাতত এটুকু বলা যাচ্ছে, মঙ্গল অভিযানের খরচ কমিয়ে আনার মিশনে সঠিক পথেই এগোচ্ছেন ইলন মাস্ক ও স্পেসএক্স।
আপনার মতামত জানানঃ